উত্তর: ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ মিশন। এটি নবী-রাসূলদের কাজ। রাসূল (ﷺ) বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর মিশন এবং তাঁর অনুসারীদের মিশন হচ্ছে- আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: قُلۡ هٰذِهٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ ؕ وَ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ وَ مَاۤ اَنَا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ “হে রাসূল আপনি) “বলুন, এটাই আমার পথ, আমি জেনে-বুঝে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারা। আর আল্লাহ্ কতই না পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।”[সূরা ইউসূফ, আয়াত: ১০৮] তাছাড়া ইসলামের দিকে আহ্বান করা একটি উত্তম আমল।যেহেতু এই দাওয়াত দানের মাধ্যমে মানুষ সরল পথের দিশা পায়। এর মাধ্যমে মানুষকে তার দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তির পথ দেখানো হয়। মহান আল্লাহ বলেন,وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ “আর ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”[সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ৩৩]
.
ইসলামী শরীয়তে আমভাবে সকল মুসলমান এবং খাসভাবে আলেম সমাজকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ “আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
بَلِّغُوْا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً
“আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছিয়ে দাও”(সহিহ বুখারী হা/৩৪৬১) আল্লাহ্র দিকে দাওয়ার দেয়ার রয়েছে মহান মর্যাদা ও অফুরন্ত প্রতিদান। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন হেদায়েতের দিকে আহ্বান করে সে ব্যক্তির জন্য রয়েছে এমন প্রতিদান যে প্রতিদান এ হেদায়েতের অনুসরণকারীগণও পাবেন; কিন্তু অনুসারীদের প্রতিদান হতে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কোন ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করে সে ব্যক্তির জন্য রয়েছে এমন গুনাহ যে গুনাহ এ ভ্রষ্টতাতে লিপ্ত ব্যক্তিরা পাবে; কিন্তু অনুসারীদের গুনাহ থেকে বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না”[সহিহ মুসলিম হা/২৬৭৪)
.
আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দান একটি মহান মিশন ও গুরু দায়িত্ব। কারণ দাওয়াত মানে- মানুষকে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে ডাকা, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসা, অনিষ্টের জায়গায় কল্যাণ বপন করা, বাতিলের বদলে হক্ককে স্থান করে দেয়া। তাই যিনি দাওয়াত দিবেন তার কুরআন সুন্নার আলোকে বিশুদ্ধ ইলম, ফিকহ, ধৈর্য, সহনশীলতা, কোমলতা, দয়া, জান-মালের ত্যাগ, নানা পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মানুষের আচার-অভ্যাস সম্পর্কে অবগতি ইত্যাদি গুণ থাকা প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি মানুষকে দাওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াযের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে তর্ক করুন উত্তম পদ্ধতিতে। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশী জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।”[সূরা নাহল, আয়াত: ১২৫] আল্লাহ তাআলা নিম্নোক্ত বাণীতে তাঁর রাসূলের উপর অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেন: “আল্লাহ্র দয়ায় আপনি তাদের প্রতি কোমল-হৃদয় হয়েছিলেন; যদি আপনি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতেন তবে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ করুন।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৫৯]
.
▪️মহিলারা কি দাওয়াতের কাজ করতে পারবে?
.
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা নারী পুরুষ সকলেরই কর্তব্য। তবে ইসলামে দাওয়াতী কাজের সর্বোত্তম প্রদ্ধতি হচ্ছে, পুরুষরা পুরুষ সমাজে দাওয়াতী কাজ করবে এবং নারীরা নারীদের মধ্যে।সুতরাং মহিলা মহলে মহিলা দাঈ দাওয়াতের কাজে বেশি উপযুক্ত। বিশেষ করে মহিলা বিষয়ক সমস্যাবলীতে মহিলা বিশেষজ্ঞই বেশি উপকারী। তবে যে নারী দাওয়াতী কাজ করবেন সর্বপ্রথম তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে সালাফদের মানহাজের আলোকে বিশুদ্ধ ইলম অর্জন করা। কারন হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: طَلَبُ العِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَىْ كُلِّ مُسْلِمٍ“প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অন্বেষণ করা ফরয।” (ইবনে মাজাহ হা/২২৪) এই হাদীস নারী পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। হাদীসে “ইলম” দ্বারা শারঈ ইলম উদ্দেশ্য। আমাদের মনে রাখা কর্তব্য, কুরআন-হাদিস থেকে লব্ধ জ্ঞানই প্রকৃত ইলম।ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদরিস আশ-শাফিয়ি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “কুরআন, হাদিস, আর দ্বীনের ফিকহ ছাড়া, যা আছে সবই নিরর্থক বিদ্যা। ইলম তো সেটাই, যার মাঝে রয়েছে ‘কালা হাদ্দাসানা (আমাদেরকে হাদিস শুনিয়েছেন)’, এর বাইরে যা রয়েছে সবই শয়তানের ওয়াসওয়াসা।” (দ্রষ্টব্য: হাফিয ইবনু কাসির বিরচিত আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড: ১৪; পৃষ্ঠা: ১৩৮; তাহকিক: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুহসিন আত-তুর্কি; দারু হাজর কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হি./২০০৩ খ্রি.) ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ, তাঁর রসুল, আর সাহাবিগণ যা বলেছেন,সেটাই প্রকৃত ইলম।”।অতএব যে নারী দাওয়াতী করবেন তার ইলম ও আমল সালাফদের মানহাজের আলোকে সঠিক হতে হবে।কারণ দাঈ যদি ভুল পথের পথিক হয় তাহলে সে কিভাবে অন্যকে সঠিক রাস্তা দেখাবে? এজন্য ইমাম যাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭৪৮ হি.) বলেছেন, ﺍﻟﺠﺎﻫﻞ ﻻ ﻳﻌﻠﻢ ﺭﺗﺒﺔ ﻧﻔﺴﻪ، ﻓﻜﻴﻒ ﻳﻌﺮﻑ ﺭﺗﺒﺔ ﻏﻴﺮﻩ “জাহিল ব্যক্তি নিজের অবস্থান সম্পর্কেই অবগত নয়, সে কীভাবে অন্যের অবস্থান সম্পর্কে জানবে?!”(দ্রষ্টব্য: ইমাম যাহাবি;সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ১১; পৃষ্ঠা: ৩২১)
.
একনজরে মহিলাদের দাওয়ী কার্যক্রম করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি:
(১) সর্বপ্রথম নিজ স্বামী/ সন্তান-সন্ততিকে ইসলামের সঠিক আদর্শ শিক্ষা দেয়া। একজন দায়িত্বশীল আল্লাহভীরু নারীকে পরিবারের ‘হৃদয়’ বলা যেতে পারে। কোন ব্যক্তির ক্বলব বা হৃদয় ঠিক থাকলে যেমন তার যাবতীয় কর্মকান্ড সুসংহত থাকে, তেমনি পরিবারে নারী তাক্বওয়াশীল হলে তার তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির মৃদু সমীরণ পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে শীতলতায় পরিতৃপ্ত করে।পরিবারের পুরুষ যত উচ্চমান আল্লাহভীরু হোক না কেন, সন্তানের ক্ষেত্রে পিতার আল্লাহভীরুতার উত্তাপ তাক্বওয়াহীন মায়ের সামনে শুকনো মড়মড়ে পাতার ন্যায় গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যায়। সন্তানের উপর মায়ের প্রভাব এতটাই বেশী।মা হলেন সন্তান গড়ার কারিগর আর পিতা তার সহায়ক শক্তি।
.
(২) নিজ আবাস গৃহে পার্শ্ববর্তী মহিলাদেরকে ইসলাম শিখানো।হাদীসে এসেছে,আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ……যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞানচর্চা করে, তাদের ওপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হতে থাকে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ (ফেরেশতাগণ) তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকাহ্’র নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার ‘আমল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।(সহীহ মুসলিম হা/২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪)
.
(৩) স্বামী বা মাহরাম সহকারে দূরে কোথাও দাওয়াতি কাজের জন্য গমন করা।কিন্তু স্বামী বা মাহরাম ছাড়া দূর দূরান্তে দাওয়াতি কাজ করতে যাওয়া বৈধ নয়; এমনকি অন্য মহিলাদের সাথে হলেও। কারন সহীহ ও সুস্পষ্ট দলীলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে নারীর জন্য মাহরাম (যার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া সফর করা বৈধ নয়। এটি শরীয়তের পূর্ণতা, মাহাত্ম্য, শরিয়ত কর্তৃক ইজ্জতের সুরক্ষা দেয়া, নারীকে সম্মান দেয়া, নারীর প্রতি গুরুত্বারোপ করা, নারীকে সুরক্ষিত রাখা এবং ফিতনা ও স্খলনের পথগুলো থেকে আগলে রাখার জন্য শরীয়তের সচেতনতার অন্তর্ভুক্ত; হোক সেই ফিতনা নারীর পক্ষ থেকে কিংবা অন্যদের পক্ষ থেকে। এই দলীলসমূহের একটি হল, ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “কোন নারী মাহরাম ব্যক্তির সঙ্গে ছাড়া সফর করবে না। মাহরাম সাথে নেই এমন অবস্থায় কোনো পুরুষ তার কাছে প্রবেশ করতে পারবে না।” এ সময় এক ব্যক্তি বলল: “হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সেনাদলের সাথে জিহাদ করার জন্য যেতে চাচ্ছি। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জ করতে যেতে চাচ্ছে।” তিনি বললেন: “তুমি তার সাথেই যাত্রা করো।”(বুখারী হা/১৭২৯ ও মুসলিমে হা;২৩৯১) সুতরাং এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে বলা যায়, একজন নারীর জন্য মাহরাম ছাড়া জ্ঞান অর্জন কিংবা দাওয়াতী কাজের উদ্দেশে সফর করার বৈধতা নেই। নারীর জন্য যে ইলম অর্জন করা ওয়াজিব সেটা অর্জনেও তার কর্তব্য সুলভ অনেক পন্থা অবলম্বন করা। যেমন: ক্যাসেট শোনা, আলেমদেরকে ফোনে প্রশ্ন করা প্রভৃতি আরো যে সকল পন্থা আল্লাহ তায়ালা বর্তমান সময়ে সহজ করে দিয়েছেন।
.
(৪) মহিলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত হলে ছাত্রীদের মাঝে দাওয়াতি কার্যক্রম করা। কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে সুষ্ঠু-সুন্দর ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। আমরা বলব, শুধু শিক্ষা নয় বরং সুশিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। নিঃসন্দেহে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সুশিক্ষা নয়। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হল মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা। তাছাড়া জ্ঞানার্জনের জন্য আবশ্যিক অনুষঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর প্রতিষ্ঠান নির্ভর এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই দাওয়াতের এক একটি বড় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কেননা শিক্ষার্থীদের মন-মগজে দ্বীনী শিক্ষা গেঁথে দিতে পারলে তাতে ফল হবে দৃঢ় ও স্থায়ী। শিক্ষার্থীদের কোমল হৃদয়ে তা অতি সহজেই বদ্ধমূল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
.
(৫) ঘরে বসে ইসলাম বিষয়ে লেখা ও তা বই কিংবা লিফলেট আকারে প্রকাশ করে তা সমাজে দাওয়াতী কাজের উদ্দেশ্য ছড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠানো। প্রতিবেশী যদি দ্বীনী অনুশাসন মেনে না চলে বা দ্বীনের জন্য সহযোগী না হয়, তাহলে স্বাধীনভাবে দ্বীন পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। বরং পদে পদে অশান্তি ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। সেকারণ পারিবারিক পরিমন্ডলে দাওয়াতের পর প্রতিবেশী ও সমাজের লোকদের নিকটে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। সমাজে জেঁকে বসা হাযারো কুসংস্কার ও শিরক-বিদ‘আতের শিকড় উপড়ে ফেলে সেখানে তাওহীদ, সুন্নাত ও বিশুদ্ধ ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করতে হবে। এতে বিরুদ্ধবাদীদের কোন পরোয়া করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,”তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে (আল্লাহর নাফরমানী হতে) ভয় প্রদর্শন করে, যাতে তারা সাবধান হয়”(সূরা তওবা ৯/১২২)।
.
(৭) ফেসবুক, টুইটার সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দেয়া।বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে মানুষের জীবনচিত্রও বদলেছে। আগের দিনের মানুষে হারিকেনের আলোতে লেখাপড়া করত আর এখন বিদ্যুত বিনে কল্পনাও করা যায় না। আগে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যরূরী বার্তা প্রেরণ করা হত, আর এখন বাটন চাপলেই মুহূর্তে কথা হয় হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা স্বজনের সাথে। এক কথায়, সারা পৃথিবী এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বলা হয়। বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমেও পরিবর্তন এসেছে বেশ। আগে যেখানে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে বা অন্য কোন যানবাহনে চড়ে গিয়ে দাওয়াত দিতে হত। এখন সেখানে ঘরে বসেই কম সময়ে আরো অধিক সংখ্যক লোকের নিকটে দাওয়াত পৌঁছানো যায় সহজে।তাই নারীরা চাইলে ঘরে বসে বিশুদ্ধ আক্বীদা মানহাজের লোখা আর্টিকেল আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেইসবুকসহ ভিবিন্ন মাধ্যমে পোস্ট করতে পারে। এছাড়াও দাওয়াতি কার্যক্রম করার বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি রয়েছে।
.
পরিশেষে, পরিবারের সদস্যরা সেভাইে গড়ে ওঠে মা যেভাবে গড়ে তুলেন। এ নীতিতে বিশ্বাস করলে নারীকে দ্বীন শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করা সুবিবেকের কাজ। সমাজের স্থিতিশীলতার স্বার্থে নারীকে দ্বীন শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। তাকে দ্বীনের বড়-ছোট নানাবিধ মাসআলা, বিধি-বিধান জানতে হবে।মহান আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমীন!(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী).
_______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।