ইসরা ও মি‘রাজ

প্রশ্ন: ইসরা ও মি‘রাজ শব্দের অর্থ কি? মি’রাজ কখন সংঘটিত হয়েছে? রজব মাসে নির্দিষ্ট কোন ইবাদত আছে কি? মি‘রাজের প্রাপ্তি কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: ‘ইসরা’ আরবি শব্দ যার অর্থ রাতের সফর।’ইসরা’ বলতে মি‘রাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত সফরকে বুঝানো হয়। পারিভাষিক অর্থে হিজরতের পূর্বে একটি বিশেষ রাতের শেষ প্রহরের কোন এক সময়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তুল্লাহ অর্থাৎ মসজিদুল হারাম হতে বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত যে সফর করানো হয়েছে সেটাকে ‘ইসরা’ বলা হয়। অপরদিকে মি‘রাজ শব্দটিও আরবি শব্দ। মি’রাজ শব্দের অর্থ হচ্ছে, উপরে আরোহন। শারঈ অর্থে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের ভূমি থেকে আকাশে আরোহণ করিয়ে প্রথম আকাশ থেকে শুরু করে সপ্তাকাশ ভেদ করে সিদরাতুল মুন্তাহা পেরিয়ে তাঁর নিজের কাছে ডেকে নিয়েছিলেন। সেটাকেই মি‘রাজ বলা হয়। সারকথা: যমীন থেকে যমীনে ভ্রমণ করা হল ইসারা। আর যমীন থেকে ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণকে মি‘রাজ বলা হয়। পবিত্র কুরআন মাজীদের সূরা বানী ইসরাঈলের ১ম আয়াতে ‘ইসরা’এবং সূরা নাজমের ১৩ থেকে ১৯ আয়াত পর্যন্ত ‘মি’রাজে’র ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া ২৬-এর অধিক সাহাবী কর্তৃক সহীহ বুখারী,মুসলিমসহ প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে মুতাওয়াতির পর্যায়ে মি‘রাজে’র ঘটনাবলী বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং মি‘রাজ অকাট্যভাবে প্রমাণিত একটি সত্য ঘটনা। যাতে সন্দেহ পোষণের বিন্দুমাত্র কোন অবকাশ নেই।(বিস্তারিত সহীহ বুখারী হা/৩৮৮৭; সহীহ মুসলিম হা/১৬৪, ১৭৮; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬)
.
ইসরা ও মি‘রাজ সম্পর্কে বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন, ‘যেমন ইসরা বা নৈশভ্রমণ কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ঠিক তেমনি মি‘রাজ বা ঊর্ধ্বগমন নবী (ﷺ)-এর মুতাওয়াতির সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তিনি আসমানে আরোহণ করেছিলেন এবং সাতটি স্তর অতিক্রম করে সপ্তমাকাশে পৌঁছে ছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর প্রতিপালকের সঙ্গে বার্তালাপ করেছিলেন এবং তখনই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়েছিল। সুতরাং যে ব্যক্তি সুস্পষ্ট শারঈ দলীল দ্বারা প্রমাণিত জেনেও এই ঘটনাকে অস্বীকার করবে এবং তার উপর অটল থাকবে নিশ্চিতরূপে সে কাফির। (ইবনু বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফাতওয়া নং ৯৭৯৩)
.
▪️ইসরা ও মি‘রাজের পটভূমি ও সংক্ষিপ্ত ঘটনা:
_______________________________________
নবুওয়তের দশম বৎসরে একের পর এক বিপদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঘিরে ধরে। রাসূলের চাচা আবু তালেব মারা যান; যিনি কাফের হওয়া সত্ত্বেও রাসূল (ﷺ)-কে সার্বক্ষনিক নিজের তত্ত্বাবধানে রাখতেন। তার জীবদ্দশায় কেউ রাসূল (ﷺ)-এর কোন ক্ষতি করতে চাইলেও সক্ষম হত না। কিন্তু তার মৃত্যুর পর কাফেররা অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠে। এর কিছুদিন পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহাও মারা যান। যিনি শুধু রাসূলের স্ত্রীই ছিলেন না; বরং তার দাওয়াতের প্রধান সহযোগীও ছিলেন। তার সমস্ত সম্পত্তি রাসূলের জন্য অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তার উপর প্রথম ঈমান এনেছিলেন। এ পথে যত কষ্ট হয়েছে সবই সহ্য করেছেন। তাদের মৃত্যুর পর রাসূল (ﷺ) অসহায় বোধ করলেন। তিনি মক্কার বিভিন্ন গোত্রপতিদের কাছে নিজেকে পেশ করে বললেন,“কে আমাকে আশ্রয় দিবে যাতে আমি আমার রবের কথা প্রচার করতে পারি?” কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিল না। এমতাবস্থায় তিনি তায়েফ গেলেন। সেখানে তায়েফের সর্দারদের কাছে তিনি একই কথা ব্যক্ত করলেন। তাদের কেউ তার কথায় কর্ণপাতই করল না। উপরন্তু তারা দুষ্ট শিশুদের তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিল। এমতাবস্থায় যা ঘটার তা-ই ঘটল। তারা তাকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে দিল।পরে তিনি মক্কায় ফিরে আসলেন।মহান আল্লাহ্ তাকে সম্মানিত করতে চাইলেন। তিনি তাকে ইসরা ও মি‘রাজের মত বিরল সম্মানে সম্মানিত করলেন। রাসূল (ﷺ)-এর ইসরা মি’রাজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে বলতে গেলে, একদা রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কা‘বার হাতীমে, অন্য বর্ণনায় (স্ত্রী উম্মে হানীর ঘরে তবে প্রথম মতটি সহীহ) ঘুমিয়ে ছিলেন। রাতের শেষভাগে জিব্রীল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশমতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বোরাকের পিঠে আরোহন করিয়ে বায়তুল্লাহ অর্থাৎ মসজিদুল হারাম থেকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস অর্থাৎ মসজিদুল আকসায় নিয়ে যান। (বোরাক হচ্ছে: চতুষ্পদ জন্তু সাদা,লম্বা,গাধার চেয়ে বড় ও খচ্চর থেকে ছোট, তার দৃষ্টির শেষ প্রান্তে সে তার পা রাখে) বায়তুল মুক্বাদ্দাস পৌঁছে তিনি বোরাক্বটিকে একটি পাথরের সাথে বেঁধে সেখানে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেন।অতঃপর জিবরিল (আঃ) রাসূল (ﷺ)-এর নিকট মদের ও দুধের পাত্র নিয় আসেন, রাসূল দুধের পাত্র গ্রহণ করলে, জিবরিল (আঃ)বলেন, আপনি ফিতরাত (স্বভাব) গ্রহণ করেছেন।(হাদীসে কুদসী হা/৯৯ তাফসীরে ইবনে কাসীর)
.
অতঃপর রাসূল (ﷺ)-এর নিকট ঊর্ধ্বলোকে ভ্রমণের বিশেষ বাহন উপস্থিত করা হয়। মতান্তরে ঐ বোরাক্বের মাধ্যমে জিব্রীল (আঃ)-তাঁকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস থেকে মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ পর্যন্ত নিয়ে যান। পথিমধ্যে প্রথম আসমানে আদম (আঃ), দ্বিতীয় আসমানে ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ), তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ), চতুর্থ আসমানে ইদ্রীস (আঃ), পঞ্চম আসমানে হারূন (আঃ), ষষ্ঠ আসমানে মূসা (আঃ) এবং সপ্ত আসমানে মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়। অতঃপর জান্নাত-জাহান্নাম ও ‘বায়তুল মা‘মূর’ পরিদর্শন করেন। সিদরাতুল মুনতাহা পৌঁছে জিব্রীল (আঃ) তাঁকে সেখানে একা রেখে চলে যান। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে ‘রফরফ’ বাহন আরশে মু‘আল্লাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এক টুকরা মেঘ আচ্ছাদিত করে ফেলে। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তারপর আল্লাহর সাথে পর্দার আড়াল থেকে আলোচনা হয়।আল্লাহ পাক উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য ৫০ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর থেকে মেঘমালা সরে গেলে তিনি জিব্রীল (আঃ)-এর সাথে দুনিয়াতে ফিরে আসার জন্য রওনা দিলেন। পথিমধ্যে ষষ্ঠ আসমানে মূসা (আঃ) রাসূল (ﷺ) মি‘রাজের প্রাপ্তি ও প্রত্যাদেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে ৫০ ওয়াক্ত সালাতের কথা বলেন। মূসা (আঃ) তাঁকে পুনরায় আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে সালাতের পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য পরামর্শ দিলেন। এভাবে কয়োকবার যাওয়ার ফলে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় অনুগ্রহে ৫০ ওয়াক্ত সালাতকে কমাতে কমাতে ৫ ওয়াক্ত করে দেন, যা ৫০ ওয়াক্তের ফযীলতের সমান। মি’রাজে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বচক্ষে জান্নাত, জাহান্নাম, বায়তুল মা‘মূর, মাকামে মাহমূদ, হাউযে কাওসার ইত্যাদি পরিদর্শন করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন আসমানে যে সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল তারাও তাঁর সাথে বায়তুল মুক্বাদ্দাসে অবতরণ করেন। অতঃপর জিব্রাঈলের ইঙ্গিতে রাসূল (ﷺ)-এর ইমামতিতে সবাইকে নিয়ে সেখানে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করেন।(কারো মতে সেটি ছিল ফজরের সালাত)। উক্ত ইমামতিতে রাসূল (ﷺ)-এর নেতৃত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।অতঃপর সালাত শেষে জিব্রীল (আঃ) আম্বিয়ায়ে কেরামকে সাথে নিয়ে রাসূল (ﷺ)-কে জাহান্নামের ফিরিস্তা মালেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। অতঃপর বোরাক্বে আরোহন করে অন্ধকার থাকা অবস্থায় তিনি পুনরায় মক্কায় ফিরে আসেন এখানেই মি’রাজের ঘটনা সমাপ্ত। মি‘রাজ ছিল রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। মি‘রাজ ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরা নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ) ছাড়া অন্য কোন নবী এই সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই মুহাম্মাদ (ﷺ) শ্রেষ্ঠ নবী। এ মি‘রাজ রজনীতেই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হয়।(দেখুন,সহীহ বুখারী হা/৩৮৮৭, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৬ ও নবীদের কাহিনি থেকে)।

রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ কি স্বশরীরে হয়েছিল নাকি স্বপ্নে হয়েছিল?
_______________________________________
প্রিয় নবী রাসূল (ﷺ)-এর কিভাবে হয়েছিল এটি নিয়ে আহালুল আলেমগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো, উক্ত ঘটনাটি জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে ঘটেছিল। ইমাম ইবনে কাসীর ও কাযী ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর ইসরা ও মি’রাজ সম্পর্কে লোকেরা মতভেদ করেছে। কেউ বলেন, তার ইসরা ও মি’রাজ হয়েছিল স্বপ্নযোগে। আবার কেউ বলেন, তা হয়েছিল স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায়। এক্ষেত্রে সঠিক কথা হলো রাসূল (ﷺ)-এর মি’রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। আর এটিকেই গ্রহণ করেছেন অধিকাংশ সালাফগণ এবং পরবর্তী অনেক ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসগণ। তাছাড়াও বিভিন্ন চিহ্ন ও নিদর্শনও প্রমাণ করে যে, তার মি’রাজ স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। (ইবনে কাসীর মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা/৫৮৬৩)। ইসরা-মি’রাজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, পরম পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রির একাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম থেকে (ফিলিস্তীনের) মাসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত। যার চতুষ্পার্শ্বকে আমরা বরকতময় করেছি। যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ (সূরা ইসরা; ১৭/১)। উক্ত আয়াতে কয়েকটি বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন:

(১).ইসরা ও মি‘রাজের পুরা ঘটনাটি রাতের শেষাংশে স্বল্প সময়ে একবার মাত্র সম্পন্ন হয়েছিল, যা ليلاً শব্দের মধ্যে বলা হয়েছে।

(২). ঘটনাটি জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে ঘটেছিল, যা بِعَبْدِهِ শব্দের মাধ্যমে বলা হয়েছে। কেননা রূহ ও দেহের সমন্বিত সত্তাকে ‘আব্দ’ বা দাস বলা হয়। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নযোগে বা রূহানী কোন ব্যাপার হলে কেউ একে অবিশ্বাস করত না এবং কুরআনে তাঁকে ‘আব্দ’ না বলে হয়তবা ‘রূহ’ (بِرُوْحِ عَبْدِهِ) বলা হতো এখানে عَبْدُهُ ‘তাঁর দাস’ বলে রাসূল (ﷺ)-কে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কেননা আল্লাহর দাস হওয়ার মধ্যেই মানুষের সর্বোচ্চ সম্মান নিহিত রয়েছে।

(৩). রাত্রির শেষ প্রহরের নিরিবিলি ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহকে পাওয়া যায়, উক্ত ঘটনার মধ্যে সেদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে।

(৪).‘ইসরা’ অর্থাৎ ভ্রমণটি ছিল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত।আল্লাহ এখানে উভয় স্থানের মসজিদ’ হিসাবে,গুরুত্ব বুঝিয়েছেন বায়তুল্লাহ হিসাবে নয়। কেননা বান্দার নিকট আল্লাহর প্রধান কাম্য হলো ‘সিজদা’। আর সিজদা হলো অবনতি স্বীকার তথা আল্লাহর প্রতি দাসত্বের প্রধান নিদর্শন। দ্বিতীয় তাৎপর্য হলো, মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আক্বসাকে কেন্দ্র করেই তাওহীদের দাওয়াত সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করে ইব্রাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠপুত্র অর্থাৎ বড়ছেল ইসমাঈল (আঃ) ও তার বংশের মাধ্যমে মক্কা এবং অপর কনিষ্ঠপুত্র ইসহাক (আঃ) ও তাঁর বংশের মাধ্যমে কিন‘আন তথা ফিলিস্তীন অঞ্চল হতে তাওহীদের প্রধান দুই কেন্দ্রের উপর শেষ নবীর অধিকার ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য রাসূল (ﷺ)-কে মাসজিদুল আক্বসা সফর করানো হয়।

(৫).‘আমরা (মসজিদুল আক্বসার) চতুস্পার্শ্বস্থ এলাকাকে বরকতমন্ডিত করেছি’ আয়াতে এই বাক্য দ্বারা উক্ত মসজিদের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। কেননা যেখানে চতুস্পার্শ্বস্থ জায়গাটি বরকতময়, সেখানে খোদ মসজিদটি নিঃসন্দেহে অনেকগুণ বেশী বরকতময়।

(৬).‘যাতে আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন সমূহের কিছু অংশ দেখিয়ে দেই’- আয়াতে উক্ত বাক্য দ্বারা ইসরা ও মি‘রাজে’র মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। ‘কিছু অংশ দেখিয়ে দেই’ বলার মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর সকল নিদর্শন তাঁকে দেখানো হয়নি। বরং তার কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। কি সেগুলো? হাদীসে যার ব্যাখ্যা রয়েছে। যেমন:
.
(ক).সফরের পূর্বে তাঁর বক্ষ বিদারণ

(খ).অতঃপর চোখের পলকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস গমন

(গ).সেখানে মসজিদে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করে জিব্রীলের সাথে ঊর্ধ্বারোহন

(ঘ). অতঃপর সাত আসমানে নেতৃস্থানীয় নবীগণের সাক্ষাত লাভ

(ঙ). অতঃপর জান্নাত, জাহান্নাম, মাক্বামে মাহমূদ প্রভৃতি স্থান পরিদর্শন

(চ). অতঃপর সর্বোচ্চ সীমান্ত রেখা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছে আল্লাহর সাথে কথোপকথন ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত লাভ

(ছ). অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস নেমে সকল নবীগনের সালাতে ইমামতি করণ

(জ). অতঃপর বোরাক্ব বাহনে মক্কায় প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি।মে‘রাজে’র পুরো ঘটনাটিই তৎকালীন সময়ের হিসাবে ছিল মানবীয় জ্ঞানের বহির্ভূত। আর তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অকল্পনীয় দ্রুততার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে যাওয়া। তাছাড়া আলোচ্য আয়াতের শুরুতে سبحن ‘সুবহানা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিষ্ময়বোধক ক্ষেত্রেই কেবল ব্যবহৃত হয়। কেননা মক্কা থেকে ৪০ দিনের পথ চোখের পলকে যাওয়া ও আসার ঘটনায় মক্কার মুশরিক নেতারা বিস্মিত হয়েছিল। (ইবনে কাসীর; মাজুম’ ফাতাওয়া: ১৬/১২৫)। মি’রাজের উক্ত ঘটনা মক্কার কাফেররা বানোয়াট বলে উড়িয়ে দিলে আবু বকর (রাঃ) আবু জাহলের মুখে একথা শোনামাত্র বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং বলেন, আমি তাকে এর চাইতে অনেক বড় বিষয়ে সত্য বলে জানি। আমি সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকটে আগত আসমানী খবরসমূহকে সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকি। এ দিন থেকেই আবু বকর ‘ছিদ্দীক্ব’ (صِدِّيْق) বা সর্বাধিক সত্যবাদী নামে অভিহিত হতে থাকেন। (মুস্তাদরাক হাকেম হা/৪৪০৭, ৩/৬২ সিলসিলা সহীহাহ হা/৩০৬)
.
▪ কখন এবং কোন রাতে রাসূল (ﷺ)-এর ইসরা ও মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল?
_______________________________________
এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, ইসরা বা মি‘রাজ রজনী একটি মহিমান্তিত রাত। কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মি‘রাজ সংঘটিত হওয়ার সঠিক তারিখ বা দিনক্ষণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কুরআন-সুন্নাহয় কিছুই বর্ণিত হয়নি। তাই কোন বছরের কোন মাসের কত তারিখ ‘ইসারা’ মি’রাজ সংঘটিত হয়েছিল এই মর্মে সুস্পষ্ট দলিল না থাকার কারণে আহালুল ইমামগনের মধ্যে একাধিক মত রয়েছে। যেমন:

(১).ইবনে হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন; মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেছেন, নবুওয়তের আগে। কিন্তু এটা একটি অপ্রচলিত মত। তবে যদি উদ্দেশ্য হয়, যে সেটা স্বপ্ন মারফত হয়েছিল সেটা ভিন্ন কথা।অধিকাংশ আলেমগণের মত হলো, মি’রাজ হয়েছিল নবুওয়তের পরে। তবে নবুওয়তের পরে কখন সেটা নিয়ে দশটির অধিক মতামত রয়েছে। (ফাতহুল বারী’,৭/২৬০)

(২).শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] বলেছেন, মি’রাজ কোন মাসে, কোন দশকে ও কত তারিখে সংঘটিত হয়েছে- এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট দলীল নেই। এ সর্ম্পকে যে সমস্ত বর্ণনা রয়েছে, তা বিচ্ছিন্ন ও মতভেদপূর্ণ, এতে নিশ্চিত হওয়ার মত কিছু নেই। (ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম যাদুল মা’আদ,১/৫৮)

(৩).আর-রাহীকুল মাখতূম-এর লেখক ছফীউর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) মৃত:২০০৬) এ বিষয়ে ৬টি মতামত উল্লেখ করেছেন। যথা: (১). নবুওয়াত প্রাপ্তির বছর, (২). ৫ম নববী বর্ষে, (৩). ১০ম নববী বর্ষের ২৭শে রজব রাতে, (৪). কেউ বলেছেন, হিজরতের ১৬ মাস পূর্বে ১২ নববী বর্ষের রামাযান মাসে, (৫). কেউ বলেছেন, হিজরতের ১৪ মাস পূর্বে ১৩ নববী বর্ষের মুহাররম মাসে এবং (৬). কেউ বলেছেন, হিজরতের এক বছর পূর্বে ১৩ নববী বর্ষের রবীউল আউয়াল মাসে। অতঃপর মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, প্রথম তিনটি মত গ্রহণযোগ্য নয় এ কারণে যে, খাদীজা (রাঃ) ১০ম নববী বর্ষের রামাযান মাসে মারা গেছেন। আর তখনও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয হয়নি। আর এ বিষয়ে সকলে একমত যে, সালাত ফরয হয়েছে মি‘রাজের রাত্রিতে। বাকী তিনটি মত সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলোর কোনটিকে আমি অগ্রাধিকার দেব তা ভেবে পাই না। তবে সূরা বনী ইসরাঈলে বর্ণিত আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্ক এ বিষয়টি প্রমাণ করে যে, ‘ইসরা’র ঘটনাটি রাসূল (ﷺ)-এর জীবনের একেবারে শেষের দিকে হয়েছিল। (আল্লাহই ভাল যানেন)। মি‘রাজের সঠিক তারিখ উম্মতের নিকটে অস্পষ্ট রাখার তাৎপর্য সম্ভবতঃ এই যে, তারা যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত উম্মতগুলির ন্যায় অনুষ্ঠানসর্বস্ব না হয়ে পড়ে। বরং মি‘রাজের তাৎপর্য অনুধাবন করে আখেরাতে জবাবদিহিতার ব্যাপারে নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে। অতঃপর মি‘রাজের অমূল্য তোহ্ফা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মাধ্যমে গভীর অধ্যাত্ম চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে দুনিয়াবী জীবন পরিচালনা করে। (বিস্তারিত দেখুন, আশ-শাইখ সফিউর রহমান আল-মুবারকপুরী: আর-রাহীকুল মাখতুম,পৃঃ১৩৭)

(৪).এমনকি কোন মাসে হয়েছে এবং কত তারিখে হয়েছে সেটি নিয়েও কমপক্ষে ৭-৮ টি মতামত রয়েছে বিস্তারিত দেখুন:আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/১০৯, আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, ১/২৭৩-৭৫ ও শরহুয যুরকানী আলাল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যাহ, ২/৬৭-৭১)

(৫).ইমাম ইবনে কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) (মৃ. ৭৭৪ হি.) বলেন,মাকদেসী (রাহিমাহুল্লাহ) যে বর্ণনার ভিত্তিতে মি’রাজ ২৭ই রজব হওয়ার মত গ্রহণ করেছেন,এর সূত্রটি বিশুদ্ধ নয়।(আল-বিদায়া, ৩/১০৯)

(৬).ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,২৭ই রজব মি’রাজ সংঘটিত হওয়ার সূত্রটি সহীহ নয়। ইব্রাহিম হারবীসহ অন্যরা এটি অস্বীকার করেছেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ পৃ. ২৩৩)

(৭).মুহাদ্দিস ইবনে দিহয়া কালবী (মৃ. ৬৩৩ হি.) বলেন, রজব মাসে মি’রাজ সংঘটিত হওয়ার মতটি ডাহা মিথ্যা। (আদায়ু মা ওজাব,পৃ. ৫৩)
.
▪️শবে মি’রাজ পালনসহ রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইবাদত করার বিধান কি?
____________________________________
শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে রজব মাসে নির্দিষ্ট কোন আমল বা ইবাদত নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের পক্ষ থেকে রজব মাসের ফযীলতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়নি। তবে রজব মাস চারটি হারাম মাসের অন্যতম। অন্যান্য হারাম মাসের মত এ মাসেও গুণাহের কাজ করা মারাত্মক অপরাধ। বিশেষভাবে এ মাসকে কেন্দ্র করে কোন ইবাদত পালন করা যাবে না। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রজব মাসে বিশেষ সিয়াম পালন করতে নিষেধ করতেন এবং সিয়াম পালন কারীদের প্রহার করতেন। (আল-ইরওয়া, হা/৯৫৭ ,সনদ সহীহ)। শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) এ মাসে বিশেষ সালাত আদায় ও রাত্রি জাগরণকে বিদ‘আত বলেছেন। (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুশ শায়খ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ), ১১তম খন্ড, পৃ. ৪২৭)। পাশাপাশি এতে কোনো সন্দেহ নাই যে, ইসরা বা মি‘রাজ রজনী একটি মহিমান্তিত রাত। তবে ইসরা ও মি‘রাজের রাতকে কেন্দ্র করে সমাজে যে অনুষ্ঠান করা হয়, যে ইবাদত করা হয় তার সবই বিদআত। কেননা এ রাতটি অনির্দিষ্ট রয়েছে, কোন মাসে ও কোন তারিখে তা সংঘটিত হয়েছিল তা স্পষ্ট করে কিছু জানা যায় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি পুতপবিত্র যিনি তাঁর বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বসা পর্যন্ত রাতের বেলায় ভ্রমন করালেন…। (সুরা বনু ইসরাঈল, ১৭/১)। আবার এ রাতের পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রায় ১২-১৩ বছর জীবিত ছিলেন কিন্তু কোনদিন মি’রাজকে কেন্দ্র করে নিজে কোন ইবাদত বা কোনো অনুষ্ঠান করে যাননি। তার সাহাবীদের করতে বলে যাননি। তার মৃত্যুপরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদা ও সাহাবায়ে কেরাম তাদের কেউ এ রাতে কোনো ইবাদত বা অনুষ্ঠান করেননি। সুতরাং অনির্ধারিত ইসরা ও মি‘রাজের রাতকে কেন্দ্র করে যেকোনো ইবাদত করা সম্পূর্ণ বিদআত। দ্বীনের মধ্যে বিদ‘আত সৃষ্টি করা গুরুতর অপরাধ। কেননা এটা কুরআন ও সুন্নাহর দলীলের পরিপন্থী। রাসূল (ﷺ)-এর ইন্তেকালের পূর্বেই দ্বীন (ইসলাম) পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (সূরা আল-মায়িদা,৫/ ৩) মহান আল্লাহ আরো বলেন,‘রাসূল (মুহাম্মাদ) যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে তোমরা বিরত থাকো।(সূরা হাশর; ৫৯/৭)।আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন; ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল যে ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ নেই, তাহলে তা পরিত্যাজ্য।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫১৭১)
.
মি‘রাজ থেকে প্রাপ্তি,উদ্দেশ্য এবং শিক্ষা:
___________________________________
মি‘রা’জে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে স্বীয় সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে পুরস্কার স্বরূপ তিনটি বিষয় প্রদান করেন। যথা: (১). পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। যা ফযীলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্তের সমান। সুতরাং সালাত হলো উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় পুরস্কার।

(২). সূরা বাক্বারাহর শেষের কয়েকটি আয়াত (২৮৫-৮৬)। কারণ এ আয়াতগুলোতে উম্মতের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

(৩). উম্মত মুহাম্মাদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদেরকে ক্ষমা করার সুসংবাদ। কারণ শিরক হলো পাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ। (সূরা লোকমান; ১৩, সহীহ মুসলিম হা/১৭৩ মুসনাদে আহমাদ, হা/ ৩৬৬৫, মিশকাত হা/৫৮৬৫)। মহান আল্লাহ অন্য কোন পাপের কারণে সরাসরি জান্নাত হারাম ঘোষণা করেননি শিরক ব্যতীত (সূরা মায়েদাহ, ৫/৭২)। আর একমাত্র শিরকের গোনাহ ছাড়া অন্যান্য গোনাসমূহ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন। (সূরা নিসা,৪/৪৮)
.
অপরদিকে মি‘রাজের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা হল,রাসূলুল্লাহ রাসূল (ﷺ)-এর মি‘রাজ তথা ঊর্ধ্বলোকে গমনের উদ্দেশ্য ব্যাপক। মহানবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নবুওয়াতী জীবনে মি‘রাজের মত এক মহিমান্বিত ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো মুখ্য তা হ’ল: (১).মহান আল্লাহ সব জায়গায় নয় বরং আরশের উপর এবং রাসূল ﷺ সেখানে গিয়ে আল্লাহর সাথে পর্দার অন্তরাল থেকে কথা বলেছেন এটি প্রমানিত।

(২).ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন,

(৩) অদৃশ্য ভাগ্য সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ।

(৪) ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন,

(৫) স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন,

(৬) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাৎ ও পরিচিত হওয়া,

(৭) সুবিশাল নভোমন্ডল পরিভ্রমণ করা, এবং

(৮) সর্বোপরি এটিকে একটি অনন্য মু‘জিযা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।মি‘রাজের শিক্ষা সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ‘আবদ’ বা দাস বলে সম্বোধন করেছেন। এর মর্মার্থ এই যে, বান্দার জন্য এর চেয়ে সম্মানিত কোন নাম আল্লাহর কাছে নেই, থাকলে অবশ্যই সে নামে রাসূল (ﷺ)-কে সম্বোধন করে সম্মানিত করা হ’ত। আর মি‘রাজের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হ’ল সর্বপ্রকার গর্ব-অহংকার চূর্ণ করে আল্লাহর সবচেয়ে বড় দাস হওয়ার চেষ্টা করা। কারণ দাসত্বের মধ্যেই সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদা নিহিত রয়েছে। অতএব জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর দাসত্ব করা ও সালাতের হেফাযত করাই হ’ল মি‘রাজের সবচেয়ে বড় এবং মূল শিক্ষা।মহান আল্লাহ আমাদেরকে মি‘রাজের প্রকৃত শিক্ষা উপলব্ধি করে শিরক-বিদ‘আতসহ সর্বপ্রকার গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
_____________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: