ইলমে গায়েব

প্রশ্নঃ এক পীর ওয়াজরে বয়ানে বলেন যে রাসুল ﷺ ইলমে গায়েব বা অদৃশ্য জগতের জ্ঞান রাখেন। এটা কি সত্য?
■উত্তরঃ
এ ধরনের দাবী একেবারেই অমূলক। কেননা কোরআনে এ দাবীর বিপরীতে অনেক বর্ণনা রয়েছে। একমাত্র মহান আল্লাহ-ই গায়েব জানেন। আমি এ সম্পর্কিত কিছু দলিল পেশ করছি।
.
270d দলিল একঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
قُل لَّا يَعْلَمُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
-তাদেরকে বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখে না৷ এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে ।
[সূরা নামল ৬৫]
.
270d দলিল দুইঃ
মহান আল্লাহ বলেন,
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
-আর তাঁরই কাছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি রয়েছে, কেউ তা জানে না তিনি ছাড়া। আর তিনি জানেন যা আছে স্থলদেশে ও সমুদ্রে। আর গাছের এমন একটি পাতাও পড়ে না যা তিনি জানেন না, আর নেই একটি শস্যকণাও মাটির অন্ধকারে, আর নেই কোনো তরতাজা জিনিস অথবা শুকনোবস্তু -যা রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।
[সূরা আনআম ৫৯]
.
270d দলিল তিনঃ
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
-আর মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়বস্তু আল্লাহ্‌রই, আর তাঁরই কাছে বিষয়-আশয়ের সব-কিছু ফিরিয়ে আনা হবে। সুতরাং তাঁর উপাসনা কর আর তাঁরই উপরে নির্ভর কর। বস্তুতঃ তোমরা যা কর সে-সন্বন্ধে তোমার প্রভু অনবহিত নন।
[সূরা হুদ ১২৩]
.
270d দলিল চারঃ
রাসুল ﷺ গায়েবের খবর জানেন এ রকম বিন্দুমাত্র অনুমান বা ধারনাও যেন মানুষ করতে না পারে তা আল্লাহ জানিয়ে ছিলেন এভাবে-
قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ ۚ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
-হে মুহাম্মাদ! তাদেরকে বলুন, নিজের জন্য লাভ-ক্ষতির কোন ইখতিয়ার আমার নেই৷ একমাত্র আল্লাহই যা কিছু চান তাই হয়৷ আর যদি আমি গায়েবের খবর জানতাম, তাহলে নিজের জন্যে অনেক ফায়দা হাসিল করতে পারতাম এবং কখনো আমার কোন ক্ষতি হতো না৷ আমি তো যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদের জন্য নিছক একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা মাত্র৷
[সূরা আরাফ ১৮৮]
.
270d দলিল পাঁচঃ
আবার অনেক সময় তিনি গায়েব জানেন এমন বক্তব্য কেউ বললে তিনি তাৎক্ষনিক তা খন্ডন করতেন। যেমন মহিলা সাহাবী রুবাই বিনতে মুআওবিয়া (রা.)বলেন-
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي الْحُسَيْنِ، – اسْمُهُ خَالِدٌ الْمَدَنِيُّ – قَالَ كُنَّا بِالْمَدِينَةِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَالْجَوَارِي يَضْرِبْنَ بِالدُّفِّ وَيَتَغَنَّيْنَ فَدَخَلْنَا عَلَى الرُّبَيِّعِ بِنْتِ مُعَوِّذٍ فَذَكَرْنَا ذَلِكَ لَهَا . فَقَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ صَبِيحَةَ عُرْسِي وَعِنْدِي جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ وَتَنْدُبَانِ آبَائِي الَّذِينَ قُتِلُوا يَوْمَ بَدْرٍ وَتَقُولاَنِ فِيمَا تَقُولاَنِ وَفِينَا نَبِيٌّ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ . فَقَالَ ” أَمَّا هَذَا فَلاَ تَقُولُوهُ مَا يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ إِلاَّ اللَّهُ ”
-আমার বিয়ের দিন সকালে রাসুল ﷺ আমার ঘরে প্রবেশ করেন, তখন আমার নিকট দু’জন বালিকা বসে গীত গাচ্ছিলো, আমার বাপ দাদাদের নিয়ে যারা বদরের যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলো। তারা তাদের কথার মাঝে মাঝে বলছিলো, আমাদের মধ্যে একজন নবী রয়েছেন যিনি আগামীকাল (অর্থাৎ ভবিষ্যতে) কি হবে তা জানেন। তখন রাসুল ﷺ বলেন, এ কথা বলা না, আগামীতে (অর্থাৎ ভবিষ্যতে) কি হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।
[ইবনে মাজাহ হা/১৮৯৭]
.
270d দলিল ছয়ঃ
এ সম্পর্কিত অন্য একটা হাদীস হলো-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ مَنْ حَدَّثَكَ أَنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ فَقَدْ كَذَبَ وَهْوَ يَقُولُ {لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ} وَمَنْ حَدَّثَكَ أَنَّهُ يَعْلَمُ الْغَيْبَ فَقَدْ كَذَبَ، وَهْوَ يَقُولُ لاَ يَعْلَمُ الْغَيْبَ إِلاَّ اللَّهُ
-আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যাক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ ম্বীয় প্রতিপালককে দেখেছে, অবশ্যই সে মিথ্যা বলল। কেননা তিনি (আল্লাহ) বলছেন, চক্ষুরাজি কখনো তাকে দেখতে পায় না। আর যে ব্যাক্তি তোমাকে বলে মুহাম্মাদ গায়েব জানেন, অবশ্য সেও মিথ্যা বলল। কেননা তিনি বলেনঃ গায়েব জানেন একমাত্র আল্লাহ।
[বোখারী হা/৩২৩৪,৭৩৮০]
.
270d দলিল সাতঃ
ইলমে গায়েব সম্পর্কিত রাসুল ﷺ এর আর একটি প্রসিদ্ধ হাদীস হলো-
حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ دِينَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَفَاتِيحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ لاَ يَعْلَمُهَا إِلاَّ اللَّهُ، لاَ يَعْلَمُ مَا تَغِيضُ الأَرْحَامُ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ يَعْلَمُ مَا فِي غَدٍ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ يَعْلَمُ مَتَى يَأْتِي الْمَطَرُ أَحَدٌ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ تَدْرِي نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ يَعْلَمُ مَتَى تَقُومُ السَّاعَةُ إِلاَّ اللَّهُ ”
-ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইল্‌ম গায়েব এর চাবি কাঠি পাঁচটি, যা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা। তা হল:
১। মাতৃগর্ভে কি আছে তা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা।
২। আগামী দিন কি হবে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেনা।
৩। বৃষ্টি কখন আসবে তা আল্লাহ ব্যতিত আর কেউ জানেনা।
৪। কোন ব্যাক্তি জানেনা তার মৃত্যু কোথায় হবে এবং
৫। কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে তা আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ জানেনা।
[বোখারী হা/১০৩৯,৪৬২৭,৪৬৯৭,৪৭৭৮,৭৩৭৯]
.
যদি রাসুল ﷺ গায়েবের খবর জানতেন তাহলে রাসুল ﷺ এর জীবনে বিভিন্ন দুঃখজনক ঘটনার অবতারণা হতো না। যেমন তায়েফ বা উহুদের যন্ত্রনাদায়ক ঘটনা। তেমনি ভাবে মা আয়েশা (রাঃ) এর গলার হার হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদের মতো জঘন্যতম ঘটনা রাসুল ﷺ কে পীড়া দিতে না। ঐ সকল ঘটনায় আল্লাহর তরফ থেকে আয়াত নাযিল হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সত্য জানতেও পারেন নাই।
.
☞ এখন আপনি সিদ্ধান্ত নিন, আপনি কার কথা মানবেন মহান আল্লাহ তায়ালার, নাকি ঐ সমস্ত ভন্ড পীরদের যারা বলে নবী ﷺ গায়েব জানতেন। আপনার পীর গায়েব সমন্ধে কি বলেছেন আর উপরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ﷺ কি বলেছেন, তা যাচাই করে নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন; আশা করি উওর পেয়ে যাবেন।
.
আল্লাহ সবাইকে শিরকমুক্ত আক্বীদা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুক, আমিন…!
.
[আল্লাহ ভালো জানেন]

Share: