ইডেন মহিলা কলেজের মেয়েদের সতীত্ব থাকে না বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা

ইডেন মহিলা কলেজের মেয়েদের সতীত্ব থাকে না’’ বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলা উচিত মনে করছি।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬
বর্তমান ফেসবুকে অন্যতম ভাইরাল একটি নিউজ ‘‘ইডেন কলেজের মেয়েদের সতীত্ব থাকে না’’ এমন একটি ভাবনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যা এতদিন কানাঘুষা ছিল, কিন্তু এখন এটি চটকদার রসালো আলোচনার বিষয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে দেশের মজুমদারদের মত নারীবাধী সেক্যুলার বা নাস্তিকবাদীদের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, দেখা যায়নি শাহবাগের মোড়ে প্রগতিশীল নারীবাদীদের স্লোগান। কিন্তু কি হতো! যদি এমন ঘটনা ইডেন মহিলা কলেজে না হয়ে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মহিলা মাদ্রাসায় হত? তখন তো নাস্তিকবাদীদের চুলকানির জ্বালায় ফেসবুক ইউটিউবে ঢোকা কষ্টকর হয়ে যেত। এমনকি দেশের সকল মহিলা মাদ্রাসা বন্ধের দাবিতে শাহবাগে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে যেত অন্তত ১০- ১২ জন প্রগতিশীল নারীবাদী। যাইহোক আজ আর আগে বাড়ালাম না।
.
মহান আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত দ্বীন (আলে-ইমরান: ১৯)। আর এই দ্বীনে মহান আল্লাহ নারীর মর্যাদাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। নর-নারীর সমন্বয়েই মানব জাতি। নারী জাতি হলো মহান আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। আল্লাহ তা‘আলা নারীকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মানব জীবন পরিচালনার জন্য পারস্পরিক সহযোগী করেছেন। ইসলাম মর্যাদার দিক দিয়ে নারীকে পুরুষের থেকে ভিন্ন করে দেখেনি। বরং ইসলামের আগমনেই নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত নারী সমাজ পেয়েছে মুক্তির সন্ধান। ইসলাম পূর্ব যুগে নারী ছিল সবচেয়ে অবহেলিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ এবং বাজারের পণ্য হিসাবে গণ্য করা হতো। সেই সময়ে নারীদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হতো না এবং তাদের কোন সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানব জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের প্রতি খুবই কঠোর আচরণ করা হতো। সে যুগে নারীদেরকে মনে করা হতো দাসী এবং ভারবাহী পশু হিসাবে। যাদেরকে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো। সে আমলে স্বামী যত খুশি স্ত্রী গ্রহণ করত এবং ইচ্ছা করলে তার স্ত্রীকে অপরের কাছে বিক্রি করে দিতে পারত। কিংবা স্ত্রীকে দিয়েই কেউ ঋণ পরিশোধ করত। আবার কেউ উপহার হিসাবে কাউকে এমনিই দিয়ে দিত। তারা কন্যা সন্তান জন্মকে লজ্জাজনক মনে করে স্বীয় নিষ্পাপ কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও কুণ্ঠিত হতো না। তাদের এমন বিবেক বর্জিত কর্ম সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَإِذَا الْمَوْؤُوْدَةُ سُئِلَتْ، بِأَيِّ ذَنْبٍ قُتِلَتْ، ‘আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’? (সূরা তাকভীর ৮-৯)।
.
সেযুগে তারা পিতা-মাতা বা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকেও বঞ্চিত হতো। পিতৃহীনা সুন্দরী-ধনবতী বালিকার অভিভাবক যথাযথ মোহর দানে তাকে বিবাহ করতে সম্মত হতো না। আবার অন্যত্র বিবাহ দিতেও অসম্মতি প্রকাশ করত। সুন্দরী বাঁদী দ্বারা দেহ ব্যবসা করিয়ে অর্থ উপার্জন করা হতো। এ গর্হিত কাজ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, وَلاَ تُكْرِهُوْا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ إِنْ أَرَدْنَ تَحَصُّناً لِّتَبْتَغُوْا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا، ‘আর তোমরা দুনিয়ার ধন-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে তোমাদের যুবতী দাসীদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে না। যখন তারা পাপমুক্ত থাকতে চায়।’ (সূরা নূর ৩৩)। উল্লিখিত যুগে একের অধিক নারী বিবাহ করে তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হতো। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহণের অবকাশও দেওয়া হতো না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানুষিক যুলুম অত্যাচার নারী জাতির উপর করা হতো। সারা দুনিয়াতে যখন নারীরা নিদারুণ অবস্থায় কালাতিপাত করছিল, আরব, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশে তাদেরকে জন্তু-জানোয়ার বলে মনে করা হতো এবং মানুষ হিসাবে তাদের কোন মর্যাদা ও অধিকার স্বীকার করা হতো না, তখন ইসলাম নারীর যথাযথ অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করে নারী জাতিকে সম্মানের সুউচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা পুরুযষদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ‘তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।’ (সূরা বাক্বারাহ ১৮৭)। নারীদেরকে ইসলাম কত সম্মান,মর্যাদা দিয়েছে আজ নারীরা ইসলামের সেই মর্যাদাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে সেক্যুলার, নাস্তিকবাদী,পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির
সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। কবে বুঝবে আমাদের এই মা-বোনরা কা রা তাদের জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী আর কারা বিপথগামী।
.
“ইডেন কলেজের মেয়েদের সতীত্ব থাকে না” সবাইকে উদ্দেশ্য করে আম ভাবে বলা এই ধরনের বক্তব্য দেওয়া বা চিন্তা-ভাবনা করা খুবই জঘন্য এবং ভয়ংকর।কারন যতটুকু জেনেছি ইডেন কলেজে প্রায় ছাত্রী সংখ্যা ৩৫ হাজার। আর এই ৩৫ হাজার ছাত্রীর মধ্যে সবাই যে খারাপ না এটা একজন সুস্থ বিবেকবান মানুষ থেকে শুরু করে পাগলেও মানতে বাধ্য হবে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের একটি অংশের নষ্টামির জন্য প্রতিষ্ঠানের সব মেয়েকে জড়িয়ে কথা বলা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মারাত্মক অন্যায়। সুরা হুজুরাতে আল্লাহ তা‘আলা ‘‘অধিক ধারণা করা’’ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আবার এটিও বলেছেন যে, অনেক ধারণাই মিথ্যা। মহান আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না। (সূরা হুযরাত ৪৯/১২)।
.
আম্মাজান আয়িশা (রা.) এর বিরুদ্ধে মুনাফিকদের ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা আল্লাহর কাছে এতই ভয়াবহ ছিলো যে, তিনি ১০ টি আয়াত অবতীর্ণ করে তাঁর নিষ্কলুষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন। (দেখুন সুরা নুর ১১-২০ দ্রষ্টব্য)। হাদিসে যে কয়টি গুনাহকে সবচেয়ে মারাত্মক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো, কোনো সতী-সাধ্বী নারীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা। এমনকি এর শাস্তিও আল্লাহ বর্ণনা করে দিয়েছেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে কারো উপর যেনার অপবাদ দিয়ে প্রচার করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা অপবাদ দানকারীর শাস্তি হলো ৮০ বেত্রাঘাত। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়। অথচ চারজন (প্রত্যক্ষদর্শী) সাক্ষী হাযির করতে পারে না। তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর। আর তোমরা কখনোই তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। বস্ত্ততঃ এরাই হলো পাপাচারী।(সূরা নূর ২৪/৪-৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে যে, সতী-সাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। (ফৎহুল বারী ১২/১৮১)। আব্দুল্লাহ্ বিন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: হিলাল বিন উমাইয়াহ্ (রাঃ) শারীক বিন সা’হ্মা’ (রাঃ) কে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছে বলে অপবাদ দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:الْبَيِّنَةُ أَوْ حَدٌّ فِيْ ظَهْرِكَ. ‘সাক্ষী-প্রমাণ দিবে। নতুবা তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হবে।’’(সহীহ বুখারী ২৬৭১ ও ৪৭৪৭) উল্লেখ্য,শরী‘আত নির্ধারিত দন্ডবিধি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের, অন্যদের নয়। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ, ২২তম খণ্ড,পৃ. ৩৫)।
.
সুতরাং, যারা ঢালাওভাবে ইডেনের ছাত্রীদের চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করছেন, তাদের সাবধান হওয়া দরকার। আল্লাহ যদি আপনাদের কাছে প্রমাণ চান, তখন দিতে পারবেন প্রমাণ? চারজন সাক্ষী অথবা নিজ মুখে স্বীকারোক্তি ব্যতীত কারও বিরুদ্ধে যিনার অপবাদ দেওয়া মারাত্মক কবিরা গুনাহ। ইডেনের কোনো মেয়েকে দেখলেই যদি আপনার মনে এ ধরণের চিন্তা আসে, তাহলে আপনার সংশোধন জরুরি। নষ্টামি শুধু ইডেন কলেজে হয় না। আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে, প্রতিষ্ঠানে, মিডিয়া হাউসে হয়, হচ্ছে। তাই,কোনো প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে বুলিং করা অসততা। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
______________________
উপস্থাপনায়:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

Share: