আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে অবৈধ সম্পর্ক ত্যাগ করার মর্যাদা

সচেতন মানুষের কাছে অজানা নয় যে, বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে হারাম রিলেশন বা যুবক-যুবতিদের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক ও পরকিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তথাকথিত বয় ফ্রেন্ড আর গার্ল ফ্রেন্ড বা কথিত জাস্ট ফ্রেন্ড নামক শয়তানি সম্পর্কের ফলে জিনা-ব্যভিচার সমাজে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ইসলামে তা কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন,

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‎

“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” [সূরা ইসরা: ৩২]

ইসলামি ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী জিনা-ব্যভিচার কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তা হল, বিবাহিত পুরুষ-নারী জিনায় লিপ্ত হলে এবং আদালতে তাদের স্বীকারোক্তি বা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে তা প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি হল, রজম বা প্রস্তর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ। আর অবিবাহিত পুরুষ-নারীর জিনা প্রমাণিত হলে তার শাস্তি, জিনাকারীদের প্রত্যেকেই ১০০ করে বেত্রাঘাত এবং এক বছর দেশান্তর (বর্তমানে জেল বা নাগরিকত্ব বাতিল)।

সুতরাং যে সব যুবক-যুবতি তাদের যৌবনের চাহিদা মেটাতে কু প্রবৃত্তির তাড়নায় বা শয়তানের প্ররোচনায় এহেন ভয়াবহ হারামের পথে পা বাড়িয়েছে তাদের উচিৎ, মৃত্যু দূত তাদের কাছে আসার পূর্বেই এহেন জঘন্য শয়তানের পথ থেকে তওবা করে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নির্দেশিত হালাল পন্থায় বিয়ের মাধ্যমে তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করা।

❐ হারাম রিলেশন বা অবৈধ সম্পর্ক থেকে ফিরে আসার মর্যাদা:

◆ মনে রাখাতে হবে যে, মহান আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে পাপাচারের পঙ্কিল থেকে ফিরে আসার তাওফিক দান করেন, বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্ক এবং সর্বপ্রকার হারাম কাজ থেকে রক্ষা করেন এবং তওবা করত: সৎপথে চলার তাওফিক দান করেন। “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”-এর মধ্যেই এই অর্থ সন্নিহিত রয়েছে।
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।” অত্যন্ত মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ একটি মহান বাক্য। এর বিভিন্ন অর্থের মধ্যে অন্যতম একটি অর্থ হল:
لا حول عن معصية الله إلا بعصمته ، ولاقوة على طاعته إلا بمعونته
“আল্লাহ যদি রক্ষা না করেন তাহলে আল্লাহর নাফরমানি থেকে বাঁচা সম্ভব নয় এবং আল্লাহ যদি সাহায্য না করেন তাহলে আল্লাহর কোনও আনুগত্য মূলক কাজ করা সম্ভব নয়।”- ইবনে মাসউদ রা. থেকে এই অর্থ বর্ণিত হয়েছে। [শরহে সহিহ মুসলিম, ১৭/২৬]
সুতরাং কেউ যদি কোনও হারাম রিলেশনে যুক্ত থাকার পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর ভয়ে তওবা করে সেখান থেকে ফিরে আসে তাহলে তার উচিৎ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। কেননা আল্লাহ তাকে এই গুনাহের পথ থেকে রক্ষা করেছেন।

◆ আর কেউ যদি হারাম সম্পর্ক অথবা অন্য কোনও কাজ আল্লাহর ভয়ে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরিত্যাগ করে তাহলে আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় দান করবেন ইনশাআল্লাহ। এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا لِلَّهِ إِلَّا بَدَّلَكَ اللَّهُ بِهِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَكَ مِنْهُ».
“তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কিছু পরিত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমাকে এমন কিছু দান করবেন যা তার চেয়েও উত্তম।” [মুসনাদে ইমাম আহমদ, হা/ ২১৯৯৬, শাইখ আলাবানি বলেন, “এটি ইমাম মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ।” তবে কোনও কোনও বর্ণনায় এ হাদিসে অতিরিক্ত فى دينه ودنياه “দীন ও দুনিয়ায়” শব্দটি এসেছে। কিন্তু এ অতিরিক্ত অংশটুকু موضوع বা বানোয়াট। দ্র. সিলসিলা যইফা, ১/৬২]

◍◍ আল্লামা বিন বায রাহ. বলেন,

مَن ترك شيئًا اتِّقاء الله عوَّضه الله خيرًا منه، وهو بمعنى: وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا [الطلاق:2]
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কোনও কিছু পরিত্যাগ করে আল্লাহ তাকে তাকে প্রতিদান হিসেবে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন”-এ কথাটা এই আয়াতের অর্থবোধক (আল্লাহ বলেন),
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا ‎
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন।” [সূরা তালাক: ২]

◆ শুধু তাই নয়, যারা পাপাচার থেকে তওবা করে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের অতীতের পাপগুলোকে শুধু ক্ষমাই করেন না বরং সেগুলোকে নেকিতে রূপান্তরিত করে দেন। সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
“কিন্তু যারা তওবা করে, ইমান আনয়ন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকিতে দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল ফুরকান: ৭০]

➤ উল্লেখ্য যে, কেউ যদি হারাম সম্পর্ক অব্যাহত রাখার বা অন্য যে কোনও হারাম কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ও আগ্রহ পোষণ করে কিংবা এ জন্য সে প্রচেষ্টাও চালায় কিন্তু কোনও প্রতিবন্ধকতার কারণে তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম না হয় তাহলে সে এ কারণে নেকি বা উত্তম প্রতিদান পাবে না বরং তার আমলনামায় গুনাহ লিপিবদ্ধ করা হবে-তা পরিত্যাগ করা সত্ত্বেও। কারণ সে আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করেনি বরং কেউ দেখে ফেলবে বা ধরা খেয়ে যাবে বা অন্য কোনও বাধার কারণে সে তা করতে পারেনি। সুতরাং তার নিয়তের কারণে সে হারাম কাজটি না করার পরও গুনাহগার বলে গণ্য হবে। কারণ আল্লাহ বান্দাকে তার নিয়ত অনুযায়ী কর্মফল দান করেন।

❐ সারাংশ,

● ক. আল্লাহ তাআলা যাকে হারাম রিলেশন বা যে কোনও হারাম কাজ থেকে ফিরে আসার এবং তওবা করার সুযোগ করে দেন তাহলে এটি তার প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ তাওফিক (সাহায্য)। এ জন্য তার উচিৎ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।

● খ. কেউ যদি আল্লাহর ভয়ে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হারাম রিলেশন থেকে ব্রেক আপ করে তাহলে আল্লাহ তাকে এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।

● গ. কেউ যদি আল্লাহর কাছে তওবা করত: হারাম রিলেশন থেকে ফিরে আসে এবং পরবর্তী জীবনে অধিক পরিমাণে সৎকর্ম করে তাহলে আল্লাহ তার অতীতের সকল গুনাহকে নেকিতে রূপান্তরিত করে দিবেন।

● ঘ. কেউ যদি হারাম রিলেশন বা অন্য যে কোনও হারাম কাজ করার প্রতি ইচ্ছা ও আগ্রহ পোষণ করে বা এ জন্য চেষ্টা করে কিন্তু বিশেষ কোনও বাধার কারণে তা কন্টিনিউ করা সম্ভব না হয় তাহলে সে নিয়তের কারণে গুনাহগার হবে যদিও সে উক্ত কাজটি করতে সক্ষম না হয়।

আল্লাহ আমাদেরকে আল্লাহর শাস্তির ভয়ে সকল প্রকার গুনাহ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: