প্রশ্ন: আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃণা করার প্রকৃত অর্থ কি?কাউকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি বা ঘৃণা করি এটি ব্যক্তিকে সরাসরি বলা যাবে কি?
▬▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: মানুষ হিসাবে একজন অন্যজনের প্রতি ভালবাসা একটি স্বভাবজাত বিষয়। মানুষ নিজের প্রয়োজনে, ভবিষ্যতে কারো সাহায্য পাওয়ার জন্য, অতীতে কারো কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কারণে একে অপরকে ভালবেসে থাকে। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ার কোন স্বার্থ ব্যতীত কোন মুসলিমের অন্য মুসলিম ভাইকে ভালবাসা একটি বড় ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অন্য মুমিনকে ভালবাসা ও একসাথে কাজ করা ঈমানের দাবী।(তাওবা/৭১)। রাসূল (ﷺ) মুমিনদের উদাহরণ দিয়েছেন একটি দেহের ন্যায়, একজন ব্যক্তির ন্যায় অথবা একটি দালানের ন্যায়। যার এক অংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। আবার কোন কারণে শরীরের কোন অঙ্গ অসুস্থ হলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। (বুখারী হা/৪৮১; মুসলিম হা/২৫৮৬; মিশকাত হা/৪৯৫৫)। কিন্তু আজকে মুসলমানদের মধ্য থেকে এ গুণটি প্রায়ই উঠে গেছে। বিভিন্ন ঠুনকো অযুহাতে, ব্যক্তি স্বার্থের কারণে অথবা ফিক্বহী মাসআলার কারণে বা দলীয় ভিন্নতার কারণে মুমিনদের মধ্যে ভালবাসার অভাব দেখা যাচ্ছে।শুধু তাই নয় সামান্য কারণে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং পরস্পরে শত্রুতে পরিণত হয়। অনেক সময় মুসলিম ভাইয়ের পরিবর্তে বরং কোন অমুসিল বা শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা সম্পন্ন লোককে সাহায্য করে। এ অবস্থা থেকে বাঁচার অন্যতম পথ হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন মুসলিম ভাইকে ভালবাসা অথবা ঘৃণা করা। আলোচ্য প্রবন্ধে আল্লাহর জন্য ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্য ঘৃনা করার প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করা হলো أحباب আরবী শব্দ অর্থ ভালবাসা, বন্ধুত্ব, পছন্দ আসক্তি, ঝোঁক ইত্যাদি ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় এর দ্বারা الحب في الله ‘আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা’বুঝায়। আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা’ এর অর্থ হল: দুনিয়ার কোন স্বার্থ ব্যতীত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসা। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমানের দাবি অনুযায়ী মুসলিম ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসবে।
অনুরুপ আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করার অর্থ হলো ,আল্লাহ ও তদীয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য বর্জন এবং তার মাঝে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর প্রেম না থাকার কারণে ঘৃণা করা।এটাই ঈমানের দাবি। মোটকথা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) পছন্দই তার পছন্দ এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অপছন্দই তার অপছন্দ; সুতরাং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালোবাসার কারণেই সে তাকে ভালোবাসবে এবং তার প্রতি তাঁদের ঘৃণার কারণেই সে তাকে ঘৃণা করবে; এটাই ঈমানের দাবি। সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন, মানুষকে ভালোবাসা, বন্ধু বানানো কিংবা তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে মানুষ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। যেমন:
(১) যাদেরকে শুধু ভালোবাসতে হবে:তারা হলেন ঐসব লোক, যাদের সাথে খালেস ভালোবাসা রাখা আবশ্যক এবং কোনো প্রকার শত্রুতা পোষণ করা যাবে না। তারা হলেন খাঁটি মুমিন। যেমন নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ এবং সৎকর্মশীলগণ। তাদের সর্বাগ্রে রয়েছেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাকে নিজের জীবন, সন্তানাদি,পিতা-মাতা এবং দুনিয়ার সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশি ভালোবাসা আবশ্যক। অতঃপর মুমিনদের জননী তার সম্মানিত স্ত্রীগণ, তার পবিত্র আহলে বাইতগণ, সম্মানিত সাহাবীগণ, বিশেষ করে খেলাফায়ে রাশেদীনগণ, জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবী, আনসার ও মুহাজিরগণ, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ কারীগণ, বাইআতুর রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী অতঃপর অবশিষ্ট সাহাবীগণ।আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলের উপর সন্তুষ্ট হোন। অতঃপর তাবেঈগণ, সম্মানিত তিন যুগের লোকগণ, এ উম্মতের সালাফগণ এবং ইমামগণ যেমন চার ইমামকে ভালোবাসতে হবে।যারা অগ্রবর্তী লোকদের পরে এসেছে,তারা বলে,হে আমাদের রব, আমাদেরকে এবং আমাদের সেসব ভাইকে মাফ করে দাও, যারা আমাদের আগে ঈমান এনেছে। আর আমাদের মনে ঈমানদারদের জন্য কোনো হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না।হে আমাদের রব! তুমি অত্যন্ত মেহেরবান ও দয়ালু’’। (সূরা হাশর: ১০)। মহান আল্লাহ বলেন, মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। (হুজুরাত ৪৯/১০)।মহান আল্লাহ আরো বলেন-আল্লাহ,তার রাসূল এবং মুমিনগণই হচ্ছেন তোমাদের বন্ধু। যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং রুকু করে। আর যে আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু বানায়, তারাই আল্লাহর দলভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহর দল বিজয়ী।’’ (সূরা মায়িদা: ৫৫-৫৬)।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ বিদ্যমান,সে ঈমানের স্বাদ পাবে
(ক) যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সর্বাধিক ভালোবাসে,
খ) যে একমাত্র আল্লাহরই জন্য কাউকে ভালোবাসে এবং
(গ) আল্লাহ যাকে কুফরী থেকে মুক্তি দিয়েছেন, সে কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে ঐরূপ অপছন্দ করে,যেরূপ অপছন্দ করে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ হওয়াকে’। (সহীহ বুখারী হা/৫৮২৭; মুসলিম হা/৯৪)।
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ওয়াস্তে কাউকে ভালোবাসে, আর আল্লাহর ওয়াস্তে কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত করে, আবার আল্লাহর ওয়াস্তেই দান-খয়রাত থেকে বিরত থাকে। সে ঈমান পূর্ণ করেছে। (আবূ দাঊদ ৪৬৮১, সহীহুল জামি‘ ৫৯৬৫)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীসে আছে, আল্লাহ সাত শ্রেণীর লোককে তাঁর সুশীতল ছায়াতলে স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। তাদের একশ্রেণী হ’ল ঐ দুই লোক যারা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে ভালবাসে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়’।(বুখারী হা/১৪২৩, ৬৮০৬; মিশকাত হা/৭০১)
(২) যাদেরকে শুধু ঘৃণা করতে হবে: সম্পূর্ণরূপে ঘৃণা করতে হবে এবং যাদের সাথে ভালোবাসা ও অভিভাবকত্বহীন শত্রুতা পোষণ করতে হবে, তারা হলো নিরেট কাফের, মুশরিক, মুনাফেক মুরতাদ এবং বিভিন্ন শ্রেণীর নাস্তিক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,যারা আল্লাহ এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে,তাদেরকে তুমি আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেনা। হোক না এই বিরুদ্ধাচরণকারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা তাদের জাতি-গোত্র।” (সূরা মুজাদালা: ২২)। তিনি অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।আর যারা তার সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’’ (সূরা ফাত্হ: ২৯)। আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে দোষারোপ করতে গিয়ে বলেন, তাদের অনেককে তুমি অবিশ্বাসীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে। তাদের কৃতকর্ম এতো নিকৃষ্ট,যে কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন। আর তারা চিরকাল শাস্তিভোগ করবে। যদি এ লোকেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ, নবী এবং নবীর উপর যা নাযিল হয়েছিল তা মেনে নিতো তাহলে কখনো কাফেরদেরকে নিজেদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতো না। কিন্তু তাদের অনেক লোক আল্লাহর আনুগত্য ত্যাগ করেছে।’’ (সূরা মায়িদা: ৮০-৮১)।
(৩) যাদেরকে একই সঙ্গে ভালোবাসতে হবে এবং ঘৃণা করতে হবে: তৃতীয় আরেক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে, যাদেরকে এক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসতে হবে এবং অন্যদিক মূল্যায়ন করে ঘৃণা করতে হবে। এরূপ ব্যক্তির মধ্যে একসঙ্গে ভালোবাসা ও ঘৃণার স্বভাব একত্রিত হয়। এরা হলো পাপাচারী মুমিন। তাদের মধ্যে ঈমানের যে বিশেষণ রয়েছে,তার কারণে তাদেরকে ভালোবাসতে হবে এবং তাদের মধ্যে শিরক ও কুফুরী ব্যতীত অন্যান্য যেসব পাপাচার রয়েছে, তার কারণে তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে। এ শ্রেণীর লোকদেরকে ভালোবাসার দাবি হলো তাদেরকে নসিহত করা এবং তাদের অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করা।তাদের পাপাচারগুলোর সামনে চুপ থাকা মোটেই বৈধ নয়; বরং তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হবে, তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেয়া হবে এবং তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন, মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।(হুজুরাত ৪৯/১০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,আল্লাহ,তার রাসূল এবং মুমিনগণই হচ্ছেন তোমাদের বন্ধু। যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং রুকু করে। আর যে আল্লাহ তার রাসূল এবং মুমিনদেরকে বন্ধু বানায়, তারাই আল্লাহর দলভুক্ত। নিশ্চয় আল্লাহর দল বিজয়ী।’’ (সূরা মায়িদা: ৫৫-৫৬)।তিনি অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তার সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’’ (সূরা ফাত্হ: ২৯)। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যদি কোন ব্যক্তির মধ্যে ভাল-মন্দ, পাপ-পুণ্য ও সুন্নাত-বিদ‘আত একত্রিত হয়, তবে সে ততটুকু ভালবাসা প্রাপ্তির যোগ্য হবে, যতটুকু ভাল তার মধ্যে রয়েছে। পক্ষান্তরে সে ততটুকু ঘৃণা ও শাস্তি প্রাপ্তির যোগ্য হবে, যতটুকু মন্দ তার মধ্যে রয়েছে। অতএব একই ব্যক্তির মধ্যে সম্মান ও অপমান উভয়ের কারণ সমবেত হ’তে পারে। যেমন: চুরি করার অপরাধে গরীব চোরের হাত কাটতে হবে, তবে তার চাহিদা মিটানোর জন্য বায়তুল মাল থেকে তাকে অর্থ দিতে হবে। এটি এমন একটি মূলনীতি, যে বিষয়ে আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত একমত পোষণ করলেও খারেজী-মু‘তাযিলী ও এদের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরোধিতা রয়েছে।’ (মাজমূঊল ফাতওয়া, (মদীনা, সঊদী আরব : বাদশাহ ফাহাদ কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স; ১৪১৬ হিঃ/১৯৯৫), ২৮/২০৯)।
◾কাউকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি বা ঘৃণা করি এটি সরাসরি বলা যাবে কি?
_______________________________________
যদি কোন মুসলিম অন্য কোন মুসলিমকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসে,অত্যন্ত আপন মনে করে,তবে তাকে তা জানিয়ে দিবে। হয়ত বা সে জানার পর তার হৃদয়ের মণিকোঠায় এ ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হবে। সেও তাকে ভালোবাসবে। এতে একে অপরের সহযোগিতায় তারা এগিয়ে আসবে, এ দুনিয়া হতে বিশৃঙ্খলা, অন্যায়-অত্যাচার কমে যাবে। সমাজে বন্ধুত্ব-ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। মুসলিম সমাজ থেকে জুলুম-নির্যাতন, হিংসা-বিদ্বেষ দূর হবে।পরস্পরের মাঝে লেনদেন, আদান-প্রদান ও দা‘ওয়াত বৃদ্ধি পাবে। সমাজে তৈরি হবে এক জান্নাতী সেতুবন্ধন। এতে সমাজ থেকে মু’মিনদের মধ্য থেকে ইখতিলাফ দূর হবে।(তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৯১; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।
এই মর্মে হাদীসে দলিল রয়েছে। যেমন: রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালবাসে, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে,সে তাকে ভালোবাসে। (আবূদাঊদ হা/৫১২৪; মিশকাত হা/৫০১৬;সিলসিলা সহীহাহ হা/৪১৮)।
.
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার সাথীকে ভালবাসে, তখন সে যেন তার বাড়ীতে আসে এবং তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে।’ (ছহীহাহ হা/৭৯৭ সহীহুল জামে‘ হা/২৮১)।
ভালবাসার ক্ষেত্রেও মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা একান্ত যরূরী। রাসূল (ﷺ) বলেন, তোমার বন্ধুর সাথে ভালবাসার আধিক্য প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার শত্রু হয়ে যাবে। তোমার শত্রুর সাথেও শত্রুতার চরম সীমা প্রদর্শন করবে না। হয়ত সে একদিন তোমার বন্ধু হয়ে যাবে।’ (তিরমিযী হা/১৯৯৭;সহীহুল জামে‘ হা/১৭৮)।
উল্লেখ্য যে, যে হাদীসে বলা হয়েছে যে, “কোনও ব্যক্তি কাওকে ভাইকে ভালবাসলে সে যেন তার নিকট তা প্রকাশ করে” সে হাদিসের উদ্দেশ্যে হল, পুরুষরা পুরুষদেরকে বলবে বা নারীরা নারীদেরকে বলবে অথবা স্বামী/স্ত্রী পরস্পরকে বা মাহরাম ব্যক্তিকে বলবে। (ফায়দ আল-কাদির (১-৩১৮-৩১৯ ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব,ফৎওয়া নং-১৬৩৫৬৫)।
.
অপরদিকে কাউকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করি এটি সরাসরি বলা যাবেনা। কেননা প্রথমত এই মর্মে কুরআন-সুন্নায় রাসূল ﷺ থেকে বিশুদ্ধ কোন দলিল পাওয়া যায়না। দ্বিতীয়ত এভাবে সরাসরি বললে একদিকে যেমন ব্যক্তিকে সরাসরি অপমান করা হবে অপরদিক উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য ও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে যা ইসলাম সমর্থন করেনা। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিন, মুনাফিক এবং ফাসিক সকলকে সম্বোধন করে উপদেশ দিয়েছেন।‘‘হে মুসলিমগণ! যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ এবং অন্তরে ইসলামের প্রভাব রাখোনি, তোমরা মুসলিমদেরকে কষ্ট দিয়ো না, তাদেরকে লজ্জা দিয়ো না এবং তাদের দোষ অন্বেষণ করো না। কেননা যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ অন্বেষণ করে,আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ অন্বেষণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা যার দোষ খুঁজবেন, তাকে অপমান করবেন, যদি সে নিজের ঘরের মধ্যেও থাকে। (তিরমিযী: ২০৩২, সহীহ আত তারগীব: ২৩৩৯ সহীহ ইবনু হিব্বান: ৫৭৬৩, মিশকাত: ৫০৪৪)।
অপর বর্ণনায়, ইতবান ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) সকালে আমার কাছে আসলেন। তখন এক লোক বলল,মালিক ইবনু দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে না। তা শুনে রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমরা কি এ কথা বলনি যে,সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ বলে?তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, যে কোন বান্দা ক্বিয়ামতের দিন ঐ কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।(বুখারী হা/৬৯৩৮; মুসলিম হা/২৬৩)। অতএব অপরকে এমন গালি দেওয়া পরিহার করে নিজের আমল সংশোধনের চেষ্টায় রত হ’তে হবে। তবে স্বাভাবিক ভাবে কোন ব্যক্তির মধ্যে কোন ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড দেখলেই সেটা সমালোচনা করা যাবে। যেমন: কারো মধ্যে শিরকী, কুফুরী বা মুনাফেকি কর্মকান্ড দেখলে সর্বোচ্চ হয়ত এতটুকু বলা যেতে পারে যে, আপনার মধ্যে মধ্যে মুনাফিকের একটি আলামত রয়েছে। (বুখারী হা/৩৪; মুসলিম হা/৫৮; মিশকাত হা/৫৬)। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে দ্বীন বুঝার তওফিক দান করুন। আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।