ভূমিকা: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁর নিকট তাওবা করি, অতঃপর ইবলিশ শয়তান কান্না করে মর্মে বিশুদ্ধ হাদীসে প্রমান রয়েছে। যেমন: প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ( إِذَا قَرَأَ ابْنُ آدَمَ السَّجْدَةَ فَسَجَدَ اعْتَزَلَ الشَّيْطَانُ يَبْكِي يَقُولُ : يَا وَيْلَهُ ! – وَفِي رِوَايَةِ أَبِي كُرَيْبٍ : يَا وَيْلِي – أُمِرَ ابْنُ آدَمَ بِالسُّجُودِ فَسَجَدَ فَلَهُ الْجَنَّةُ ، وَأُمِرْتُ بِالسُّجُودِ فَأَبَيْتُ فَلِي النَّارُ ) “মানুষ যখন সাজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সাজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! আমার দুর্ভাগ্য! ইবনু কুরায়বের বর্ণনায় রয়েছে, হায়রে, আমার দুর্ভাগ্য! নবী আদাম সাজদার জন্য আদিষ্ট হলো। তারপর সে সাজদাহ করলো এবং এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হলো। আর আমাকে সাজদার জন্য আদেশ করা হলো, কিন্তু আমি তা অস্বীকার করলাম, ফলে আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হলো”।(সহিহ মুসলিম হা/১৪৬ ই.ফা. ১৪৭; ই.সে. ১৫২)
.
এই হাদিসটি ইমাম ইবনু খুযাইমা তার “সহিহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি একটি অধ্যায় রচনা করে শিরোনাম দিয়েছেন: باب فضل السجود عند قراءة السجدة ، وبكاء الشيطان ، ودعائه بالويل لنفسه عند سجود القارئ السجدة “যখন সিজদাহের আয়াত পাঠ করা হয়, তখন সিজদাহ করার সম্মানে, শয়তানের কান্না এবং সিজদাহ করা ব্যক্তিকে দেখে শয়তান তার প্রতি আফসোস ও তার বিরুদ্ধে প্রার্থনা করতে থাকে”।(ইবনু খুযাইমাহ খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭৬)
.
হাদীসটির সরল অর্থ হচ্ছে: রাসূল (ﷺ)-এর এই হাদীসে শয়তানের দুঃখ-কষ্ট প্রকাশিত হয়েছে। কারন যখন একজন মুসলিম আল্লাহর হুকুমে সিজদাহ করে, তখন শয়তান তার দুঃখ প্রকাশ করে নিজে নিজে আফসোস করে, কারণ এটি তাকে তার নিজের অহংকার ও গর্বের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দেয়। কেননা সে কোনোভাবেই চায় না যে মানুষ আল্লাহর আনুগত্য করবে। শয়তান যিনি প্রথমে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন এবং নবী আদম (আঃ)-এর প্রতি সাজদাহ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এই হাদীসে শয়তানের কথা মূলত তার হতাশা এবং আক্ষেপ প্রকাশ করছে যে,আদম (আ:) সিজদাহ করার মাধ্যমে জান্নাত লাভ করেন, এবং শয়তান সিজদাহ করতে অস্বীকার করার কারণে জাহান্নামের আসামিতে পরিণত হন।
.
হাদীসটির ব্যাখ্যায় মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী আল-মালেকী (রহঃ) তার সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আল–মুফহিম”এ বলেন:
” وبكاء إبليس المذكور في الحديث : ليس ندما على معصيته ، ولا رجوعا عنها ، وإنما ذلك لفرط حسده وغيظه وألمه بما أصابه من دخول أحد من ذرية آدم عليه السلام الجنة ونجاته ، وذلك نحو مما يعتريه عند الأذان ، والإقامة ، ويوم عرفة .وقوله : يا ويلتا : الويل : الهلاك ، وويل : كلمة تقال لمن وقع في هلكة ، والألف في : ( يا ويلتا ) : للندبة والتفجع
“এই হাদীসে উল্লেখিত ইবলিসের কাঁদার ঘটনাটি তার পাপের জন্য অনুশোচনা বা তাওবা করার কারণে নয় বরং এটি তার চরম হিংসা, ক্ষোভ এবং দুঃখের ফলস্বরূপ যা সে অনুভব করেছিল যখন সে দেখল আদম (আঃ)-এর সন্তানদের মধ্যে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করেছে এবং রক্ষা পেয়েছে। এটি তার সেই অবস্থার মতো, যা সে আযান, ইকামত, এবং আরাফাতের দিনেও অনুভব করে। এবং যখন সে (সয়তান) বলে: ‘ওয়া উইলতা’ (হায় আমার দুর্ভাগ্য): ‘উইল’ শব্দটি হলো ধ্বংস বা বিপদের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ এবং “ওয়েইল” শব্দটি এমন একজনের প্রতি বলা হয় যে ধ্বংস বা বিপদে পতিত হয়েছে। ইয়া উইলতা” (হায় আমার দুর্দশা!)’ এর মধ্যে ‘আ’ (অর্থাৎ ‘ইয়া’) একটি শব্দ যা শোক প্রকাশ এবং দুঃখের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।”(ইমাম কুরতুবী “আল–মুফহিম” খন্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৭৪)
.
পরিশেষে, এই হাদীসটি মানুষের জন্য একটি শিক্ষা প্রদান করে যে, আল্লাহর আদেশ মেনে চলার মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। শয়তান যেমন আল্লাহর আদেশ অমান্য করে তার নিজ ধ্বংস নিজে ডেকে এনেছিল, তেমনি মানুষও যদি আল্লাহর নির্দেশ পালন করে,তবে তার জান্নাতের পথ সুগম হবে ইনশাআল্লাহ। আর শয়তান এই সুযোগ হারানোর কারণে নিজেকে খুবই দুর্ভাগ্য মনে করে এবং হিংসা ও ক্ষোভে কাঁদে। শয়তান মনে করে তার প্রচেষ্টায় মানুষ যদি আল্লাহর দিকে যাত্রা শুরু করে তবে তার জন্য পরাজয় নিশ্চিত। মহান আল্লাহ সবাইকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে হেফাজত করুন। আমীন!! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
___________________________
জুয়েল মাহমুদ সালাফি