অন্যদেরকে শারঈ ইলম শিক্ষা দেওয়ার ফজিলত কী

প্রশ্ন: অন্যদেরকে শারঈ ইলম শিক্ষা দেওয়ার ফজিলত কী? আমাদের আমলের প্রতিদান কি রাসূল (ﷺ)-এর আমলনামায় লিখা হবে?
▬▬▬▬▬▬▬▬ ◈ ▬▬▬▬▬▬▬▬
ভূমিকা: ইসলামি শরীয়তে দ্বীনের জ্ঞানার্জনের ব্যাপারে অনেক বেশি উৎসাহিত করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে নাযিলকৃত প্রথম আয়াত হল,‘ইকরা’ “পড়ো”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক মুসলিম নারী পুরুষের জন্য ইলম বা জ্ঞানান্বেষণকে ফরজ (অত্যাবশ্যক) বলে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে পর্যাপ্ত আলোচনা এসেছে। ইসলামে জ্ঞানার্জনের প্রতি এত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এ জন্য যে, যেন তারা জ্ঞানের আলোকে সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল, হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ ইত্যাদি জেনে-বুঝে আমল করে, নিজের মধ্যে থেকে জাহেলিয়াত বা মূর্খতা সূলভ আচরণ দূর করে এবং সমাজকে জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাষিত করে। ইসলামের দিকে আহ্বান করা এবং অপর মুসলিমকে ইলম শিক্ষা দেওয়া আসমানের নিচে জমিনের উপরে সবচেয়ে বড় সাদকায়ে জারিয়া। কেননা শারঈ ইলম শিক্ষা দেওয়া এমন একটি সাদকা যা কখনো শেষ হবেনা, কিয়ামত অবধি চলমান থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
“আর ঐ ব্যক্তির চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, নেক আমল করে। আর বলে অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”[সূরা ফুস্সিলাত, আয়াত: ৩৩] এই আয়াতে মহান আল্লাহ ঐ সকল ব্যক্তিকে উত্তম বলেছেন, যারা মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে ও নিজে সৎকর্ম করে। মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকতে প্রয়োজন হয় ইলম তথা জ্ঞানের। অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল যেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর তারাই সফলকাম।”[সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০৪] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:بَلِّغُوْا عَنِّيْ وَلَوْ آيَةً “আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছিয়ে দাও”(সহিহ বুখারী হা/৩৪৬১) হাদীসেও ইলম শিক্ষা দেওয়ার অসংখ্য ফজিলত বর্নিত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হাদীস হচ্ছে,
.
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
( مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلَالَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنْ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا )
“যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না”।(সহিহ মুসলিম হা/ ৬৬৯৭; ই.ফা. ৬৫৬০, ই.সে. ৬৬১৪)
অপর বর্ননায় আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ
( مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ )
“যে ব্যক্তি কোন ভাল ‘আমালের পথ প্রদর্শন করে, তার জন্যে ‘আমালকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা/৪৭৯৩; ই.ফা. ৪৭৪৬, ই.সে. ৪৭৪৭)। আরেক বর্ননায় জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
(مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ )
“যে লোক ইসলামে কোন সুন্নাত চালু করলো এবং পরবর্তীকালে সে অনুসারে ‘আমাল করা হলো তাহলে ‘আমালকারীর প্রতিদানের সমান প্রতিদান তার জন্য লিখিত হবে। এতে তাদের প্রতিদানে কোন ঘাটটি হবে না”।(সহিহ মুসলিম হা/৬৬৯৩; ই.ফা. ৬৫৫৬, ই.সে. ৬৬১০) অন্য এক বর্ননায় আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
(إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلا مِنْ ثَلاثَةٍ : إِلا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ) “যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত ‘আমাল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার ‘আমাল ছাড়া। ১. সদাকাহ্‌ জারিয়াহ্‌ অথবা ২. এমন ‘ইল্‌ম যার দ্বারা উপকার হয় অথবা ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দু’আ করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম হা/৪১১৫; ই. ফা. ৪০৭৭, ই. সে. ৪০৭৬).
.
সন্মানিত পাঠকবৃন্দ উপরোক্ত এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, যে ব্যক্তি অন্য কাউকে উপকারী ইলম শিক্ষা দিবে, তাহলে যাকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে তার সে শিক্ষানুযায়ী আমলের কারণে যে নেকি হবে তার সমপরিমাণ নেকি ইলম শিক্ষাদানকারী ব্যক্তি পাবে এবং এর নেকি শিক্ষাদানকারী ব্যক্তির শিক্ষানুযায়ী যারা জ্ঞানার্জন করবে তাদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে। আর এজন্য সকল উম্মত যা আমল করে নেকি হবে তার সমপরিমাণ নেকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আমলনামার যুক্ত হবে।উপরোক্ত হাদীসগুলোর ব্যাখায় আলেমগন বলেন। যেমন:
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেন:

.. وأن من دعا إلى هدى كان له مثل أجور متابعيه ، أو إلى ضلالة : كان عليه مثل آثام تابعيه ، سواء كان ذلك الهدى والضلالة ، هو الذي ابتدأه أم كان مسبوقا إليه ، وسواء كان ذلك تعليم علم ، أو عبادة ، أو أدب ، أو غير ذلك ” .

যে ব্যক্তি হেদায়েতের দিকে আহ্বান করে সে ব্যক্তি তার অনুসারীদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। আর ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে সে ব্যক্তি তার অনুসারীদের সমপরিমাণ গুনাহ বহন করবে। হেদায়েত কিংবা ভ্রষ্টতা সে নিজেই এটাকে প্রথমবার শুরু করুক কিংবা আগে থেকেই চালু থাকুক বিধান এক। অনুরূপভাবে এটা কোন জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে হোক কিংবা কোন ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক কিংবা কোন শিষ্টাচারের ক্ষেত্রে হোক কিংবা অন্য কিছু হোক বিধান এক।(নববী; শারহু সহীহ মুসলিম,১৬তম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ২২৭)]
.
শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম জায়নুদ্দীন মুহাম্মাদ আব্দুর রউফ বিন তাজ আল-আরিফীন বিন নুরুদ্দিন আলী বিন জায়নুল আবিদীন আল-হাদ্দাদী আল-মানাবী আল-ক্বাহেরী [জন্ম: ৯৫২, মৃত্যু: ১০৩১ হি:] (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

” إن جميع حسناتنا وأعمالنا الصالحة ، وعبادات كل مسلم : مسطرة في صحائف نبينا صلى الله عليه وسلم ، زيادةَ على ما له من الأجر ، ويحصل له من الأجور بعدد أمته أضعافا مضاعفة لا تحصى ، يقصر العقل عن إدراكها ؛ لأن كل مُهْدٍ ودالٍّ وعالمٍ : يحصل له أجر إلى يوم القيامة ، يتجدد لشيخه في الهداية مثل ذلك الأجر ، ولشيخ شيخه مثلاه ، وللشيخ الثالث أربعة ، والرابع ثمانية ، وهكذا تُضَعَّف في كل مرتبة بعدد الأجور الحاصلة قبله إلى أن ينتهي إلى المصطفى صلى الله عليه وسلم .
إذا فرضت المراتب عشرة بعد النبي صلى الله عليه وسلم كان للنبي صلى الله عليه وسلم من الأجر ألف وأربعة وعشرون ، فإذا اهتدى بالعاشر حادي عشر صار أجر النبي صلى الله عليه وسلم ألفين وثمانية وأربعين ، وهكذا ، كلما زاد واحدا يتضاعف ما كان قبله أبدا إلى يوم القيامة ، وهذا أمر لا يحصره إلا الله ، فكيف إذا أخذ مع كثرة الصحابة والتابعين والمسلمين في كل عصر؟
وكل واحد من الصحابة يحصل له بعدد الأجور التي ترتبت على فعله إلى يوم القيامة ، وكل ما يحصل لجميع الصحابة حاصل بجملته للنبي صلى الله عليه وسلم ، وبه يظهر رجحان السلف على الخلف ، وأنه كلما ازداد الخلف ، ازداد أجر السلف وتضاعف ، ومن تأمل هذا المعنى ورزق التوفيق ، انبعثت همته إلى التعليم ورغب في نشر العلم ، ليتضاعف أجره في الحياة وبعد الممات على الدوام ، ويكف عن إحداث البدع والمظالم من المكوس [الإتاوة] وغيرها ، فإنها تضاعف عليه السيئات بالطريق المذكور ما دام يعمل بها عامل ، فليتأمل المسلم هذا المعنى ، وسعادة الدال على الخير ، وشقاوة الدال على الشر ”

“আমাদের সমস্ত ভাল কাজ এবং প্রত্যেক মুসলমানের ইবাদত আমাদের নবীর আমলনামায় তাঁর জন্য অতিরিক্ত প্রতিদান হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর অগণিত উম্মতের মাধ্যমে সীমাহীন প্রতিদান অর্জন হবে। মানুষের বিবেক তার প্রতিদানের হিসাব করতে সক্ষম নয়। কেননা প্রত্যেক পথপ্রদর্শক, সৎকর্মশীল ও আলেম কেয়ামত পর্যন্ত সওয়াব পাবেন। হেদায়েতের ক্ষেত্রে তার শায়েখের জন্যেও অনুরূপ প্রতিদানের মতই প্রতিদান পেতেই থাকবে, দ্বিতীয় শায়েখের জন্যেও অনুরূপ, তৃতীয় শায়েখের জন্য চার গুণ বেশি এবং চতুর্থ শায়খের জন্য আট গুণ বেশি নেকি হবে। এমনিভাবে প্রত্যেকটা পূর্ববর্তী স্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত নেকি বৃদ্ধি হতেই থাকবে। নবীর পরে যদি এই স্তরগুলো দশটি থাকে তাহলে নবী (ﷺ)-এর জন্য এক হাজার চব্বিশটি প্রতিদান হবে। আর যখন ১১তম স্তরের মাধ্যমে হেদায়েত হবে তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য ২০৪৮ টি প্রতিদান হবে। এভাবে যখনই একটি বৃদ্ধি পাবে ঠিক তখনই তার পূর্ববর্তী দের সাথে কিয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি হতেই থাকবে। আর এটি এমন একটি বিষয় যেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ হিসাব করতে পারে না। তাই সাহাবী , তাবেঈন এবং প্রত্যেকটা যুগের মুসলিমদের আধিক্যতার সাথে প্রতিদান হিসাব করা হলে কি হবে (প্রত্যেক সাহাবী, প্রত্যেক তাবেঈন এবং প্রত্যেক মুসলিমদের দায়ী অথবা ভালো মানুষদের প্রতিদান একত্রিত করা হলে কতই না নেকি হবে সুবহানাল্লাহ) ? প্রত্যেক সাহাবীর কিয়ামত পর্যন্ত যতগুলো স্তর হবে সবগুলোর প্রতিদান রাসূল (ﷺ)-এর অর্জন হবে। প্রত্যেক সাহাবীর সমস্ত অর্জিত প্রতিদান নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে যোগ হবে এবং পরবর্তীদের ওপর উপরে পূর্ববর্তীদের প্রাধান্যতা প্রকাশ করা হবে। পরবর্তীরা যত বেশি থাকবে পূর্ববর্তীদের তত বেশি নাকি হবে। যে ব্যক্তি এই অর্থটি চিন্তা করবে এবং সফলতায় ধন্য হতে চাইবে, শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার আকাঙ্ক্ষা অনুপ্রাণিত হবে। পার্থিব জীবনে এবং মৃত্যুর পরে তার প্রতিদান বৃদ্ধি করা হবে। তার জন্য বিদআত এবং জুলুমসহ অন্যান্য খারাপ কর্ম থেকে বেঁচে থাকা উচিত কেননা সেগুলোর মাধ্যমে তার গুনাহ বহু গুণাহ বৃদ্ধি হয়ে যাবে। প্রত্যেক মুসলিমকে এ অর্থটি ভালোভাবে বুঝা উচিত, ভালো কাজে সৌভাগ্যবান এবং খারাপ কাজে দুর্ভাগ্যবান হওয়ার বিষয়টি বারবার চিন্তা করতে হবে। (মানাবি; ফায়জুল ক্বদীর; খন্ড: ৬ পৃষ্ঠা;১৭০)

বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেন:

” يكتب له صلى الله عليه وسلم أجر كل ما عملته الأمة ، فكل ما عملنا من خير وعمل صالح من فرائض ونوافل ، فإنه يكتب أجره للرسول عليه الصلاة والسلام ؛ لأنه هو الذي علمنا ”

“উম্মত যে সমস্ত আমল গুলো করে তার প্রতিদান রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য লিখা হয়। আমরা যে সমস্ত সৎকর্মগুলো করি সেগুলো ফরজ হোক নফল হোক যাই হোক না কেন সেই সৎ কর্মের প্রতিদান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয় কেননা তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন।(উসাইমীন; শারহু রিয়াদিস সালিহিন খন্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৫৮)।
.
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মানব সন্তান মারা গেলে তার আমল স্থগিত হয়ে যায় কেবল তিনটি ছাড়া: সদকায়ে জারিয়া, কিংবা উপকারী ইলম…” এর দ্বারা কি শরয়ি জ্ঞান উদ্দেশ্য; নাকি দুনিয়াবী জ্ঞান?

জবাবে তিনি বলেন:

الظاهر أن الحديث عام ، كل علم ينتفع به فإنه يحصل له الأجر ، لكن على رأسها وقمتها العلم الشرعي ، فلو فرضنا أن الإنسان توفي وقد علم بعض الناس صنعة من الصنائع المباحة ، وانتفع بها هذا الذي تعلمها فإنه ينال الأجر ، ويؤجر على هذا ” .

“হাদিসের প্রত্যক্ষ মর্ম সাধারণ। প্রত্যেক যে জ্ঞানের মাধ্যমে উপকার সাধিত হয় সেটা দ্বারা সওয়াব হাছিল হবে। তবে এর অগ্রে ও চূড়াতে থাকবে শরয়ি জ্ঞান। যেমন ধরি কোন মানুষ মারা গেল। মারা যাওয়ার আগে তিনি কিছু মানুষকে কোন একটি বৈধ শিল্প শিখিয়ে গেলেন। যে ব্যক্তি এই শিল্প শিখেছে এর দ্বারা সে উপকৃত হল। তাহলে তিনি সওয়াব পাবেন; এই আমলের কারণে প্রতিদান পাবেন।”
(উসাইমীন; লিকাউল বাব আল-মাফতুহ;১৬/১১৭)

পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে, দ্বীনী ইলম অর্জন করা ও শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ আমল। কারণ এর মাধ্যমে পার্থিব জীবনে হারাম-হালাল ও আল্লাহর বিধান অবগত হওয়া যায়। ফলে পরকালীন মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য আমল করা সহজ হয়। এটা সাদাক্বায়ে জারিয়া হওয়ায় কবরের জীবন থেকে শুরু করে কেয়ামত পর্যন্ত-এর সওয়াব অব্যাহত থাকবে।রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে মহান আল্লাহর কাছে ইলম অন্বেষণ ও প্রচারকারীর জন্য বিশেষ দো‘আ রয়েছে। যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন
,نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا حَدِيثًا، فَحَفِظَهُ حَتَّى يُبَلِّغَهُ، فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ، وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ لَيْسَ بِفَقِيهٍ،
‘যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে হাদীছ শুনে তা মুখস্থ রাখল এবং অন্যের নিকটও তা পৌঁছে দিল, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের নিকট তা বহন করে নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়’(আবূ দাঊদ হা/৩৬৬২; তিরমিযী হা/২৬৫৬; সহীহুত তারগীব ৮৩) অতএব আমাদের সকলের জন্য দ্বীনী ইলম অর্জন করা অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন-আমীন। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
__________________________
আপনাদের দ্বীনি ভাই:
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।
সম্পাদনায়: ওস্তাদ ইব্রাহিম বিন হাসান (হাফি.)

Share: